রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মুনাফায় চলছে বঙ্গবন্ধু সেতু

নির্মাণ ব্যয় ৩৭৪৫.৬০ কোটি, টোল আদায় ৬১৬৩.১৭ কোটি, অতিরিক্ত আয় ২৪১৭.৫৭ কোটি টাকা

শিমুল মাহমুদ

মুনাফায় চলছে বঙ্গবন্ধু সেতু

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু এখন নির্মাণ ব্যয় মিটিয়ে মুনাফায় চলছে। সেতু নির্মাণের পর গত ২২ বছরে নির্মাণ ব্যয় ছাড়িয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের ২৫ বছরে ব্যয় উঠে আসার প্রাক্কলন করা হলেও তা উঠে আসে ১৯ বছরের মাথায়।  ১৯৯৮ সালে উদ্বোধিত বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ে সরকারের আয় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। নির্মাণ ব্যয় ছাড়িয়ে অতিরিক্ত আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। ১৯৯৮ সালের জুনে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ইতিবাচক পরিবর্তন আসে উত্তরের কৃষিজীবী মানুষের জীবনে। বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৬টি জেলায় বিভিন্ন পরিবহন যাতায়াত করে। বর্তমান সরকার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি নির্মিত হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমবে।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপারে প্রতিটি বড় বাসকে ৯০০, ছোট বাসকে ৬৫০, বড় ট্রাককে ১৪০০, মাঝারি ট্রাককে ১১০০ ও ছোট ট্রাককে ৮৫০ টাকা হারে টোল দিতে হয়। সেতুটি নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ২০৩৪ সাল নাগাদ পরিশোধ শেষ হবে। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে সেতু নির্মাণের পর প্রথম বছরে টোল আদায় হয়েছে ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আদায় হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে ৩২৪ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এদিন সর্বোচ্চ ২৭ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেতুটি নির্মাণকালে ২৫ বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনার পরিকল্পনা করা হলেও সাত বছর আগেই নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুতে প্রতি তিন থেকে চার বছর পরপর টোল আদায় বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেতুর ব্যবহার বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে টোল আদায়। ফলে সেতু নির্মাণের খরচ ২৫ বছরে তুলে আনার কথা বলা হলেও ২০১৭ সালেই নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। সেতু বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গড়ে ৫০ কোটি টাকা করে টোল আদায় হয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল বছরে ১০০ কোটি টাকার নিচে। ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে টোল আদায়ের পরিমাণ উঠে আসে ২০০ কোটি টাকায়। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ বেড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে যায়। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ওঠে ৪০০ কোটি টাকায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল আদায় হয় ৫০০ কোটি টাকার ঘরে। চলতি বছরই এটি ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর