বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ভারতে বিবিসি অফিসে ফের অভিযান, নিন্দা

প্রতিদিন ডেস্ক

বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে ভারতের কর কর্মকর্তারা তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তারা গতকালও তল্লাশি চালিয়েছেন। তারা এদিন সংবাদমাধ্যমটির ইলেকট্রনিক ও কাগজে লিপিবদ্ধ আর্থিক তথ্যের অনুলিপি সংগ্রহ করেছেন। সূত্র : রয়টার্স, এনডিটিভি

এর আগে সারা রাত তল্লাশি চালিয়ে কর্মকর্তারা ল্যাপটপ ও ফোন জব্দ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে। খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার কর বিভাগ ভারতে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমটির বিরুদ্ধে আনীত করফাঁকির অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট আরও দুই ভবনে তল্লাশি চালায়।

প্রসঙ্গত, গত মাসে বিবিসি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চান’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে। বিবিসির তথ্যচিত্রে ২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মোদির ভূমিকা তুলে ধরা হয়, যা দেশটিতে ‘বিতর্ক’-এর জন্ম দেয়। এ কারণে ভারত এরই মধ্যে ইউটিউব ও টুইটার থেকে এ প্রামাণ্যচিত্রের সব লিঙ্ক ব্লক করেছে।

গতকালের অভিযান সম্পর্কে খবরে বলা হয়, আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসির মুনাফা সরিয়ে নেওয়াসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগে এর কার্যালয় ঘেরাও করে তল্লাশি চালান। এই সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে বিবিসির অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটিও পরীক্ষা করা হয়। বিবিসির এক সাংবাদিক বলেন, ‘আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসির কর্মীদের ডেকে নিয়ে কম্পিউটার লগইন করে করের তথ্য খুঁজেছেন।’

খবরে আরও বলা হয়, নানান ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের ফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তল্লাশি শুরুর ছয় ঘণ্টা পর বিবিসি কর্মীদের কার্যালয় ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের ল্যাপটপ স্ক্যান করা হয়। কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবিসি কর্মীদের তর্ক করতেও দেখা গেছে।

 

এদিকে কর্মকর্তারা জানান, তারা আন্তর্জাতিক কর ও সংবাদমাধ্যমটির অঙ্গসংগঠনগুলোর ট্রান্সফার প্রাইসিং খতিয়ে দেখছেন। তারা অভিযোগ করেন, বিবিসিকে এ বিষয়ে নোটিস দেওয়া হলেও তারা এখনো সে নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি।

এক টুইটার বার্তায় বিবিসি জানায়, ‘আমাদের সংবাদ ও সাংবাদিকতার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমরা ভারতে আমাদের ভোক্তা-পাঠকদের সেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ’। এদিকে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ মার্কসবাদী নেতা পিনারাই বিজয়ন আয়কর বিভাগের অভিযানের নিন্দা জানিয়ে টুইটার বার্তায় জানান, ‘ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে আয়কর বিভাগের নজিরবিহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ উদ্যোগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন আপত্তিকর এবং এতে জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা অপমানিত হতে পারি।’ কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত বলেন, ‘আমাদের দেশে যা হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এখন বিবিসির ওপর হামলা হচ্ছে। তাদের রয়েছে অসামান্য বিশ্বাসযোগ্যতা। এখনো পল্লী অঞ্চলের মানুষ বিবিসি শোনে। কেন্দ্র সরকারকে এসব অভিযানের নেপথ্যের কারণগুলো প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় দেশের বদনাম হবে। পরিস্থিতি এখন খুবই গুরুতর।’

এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘আমরা সারা বিশ্বে মুক্ত সংবাদপত্রের গুরুত্বকে সমর্থন করি। আমরা মতপ্রকাশ এবং ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার গুরুত্বকে মানবাধিকার হিসেবে তুলে ধরছি, যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখে। এটি ভারতের গণতন্ত্রকেও শক্তিশালী করেছে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর