সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকেন পক্স

♦ আক্রান্ত ২৫০ জন ছাড়িয়েছে ♦ মারা গেছেন পাঁচজন ♦ বেশি আক্রান্ত শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকেন পক্স

হাসপাতালে বাড়ছে ছোঁয়াচে রোগ চিকেন পক্সে আক্রান্ত রোগী ভর্তি। ঋতু বদলে আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে এ রোগ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ বছর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জন, মারা গেছেন পাঁচজন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাধারণত এই মৌসুমে চিকেন পক্স রোগের বিস্তার হয়। এই ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, তবে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুরা বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়, তাই তাদের দিকে নজর রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। যারা অন্য কোনো অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগী, বয়স্ক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে অধিকাংশ রোগী সপ্তাহখানেকের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। অসুখ তীব্র হলে হাসপাতালে যেতে হবে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করলে চিকেন পক্স হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। তবে চলতি বছর আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। হাঁচি, কাশি, থুতুর মাধ্যমে, একসঙ্গে থাকা ও খাওয়ার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। চিকেন পক্সের যে ফোসকায় জীবাণু থাকে, এটি ফেটে গিয়েও রোগ ছড়াতে পারে।

সংক্রামক এই রোগের চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। জরুরি বিভাগে চিকেন পক্সের রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সংকটাপন্নদের ভর্তির জন্য ২৫ শয্যার ওয়ার্ডও রয়েছে হাসপাতালটিতে, যা প্রায় সময়ই পূর্ণ থাকে রোগীতে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন ২-৩ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২০ জন। এর মধ্যে শিশু ১৫ জন। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর প্রতিষ্ঠানটিতে চিকেন পক্স নিয়ে ৩৫০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১২ জনের। চলতি বছর ২৫০ রোগী ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু দুজন।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. মো. আরিফুল বাসার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়ে চিকেন পক্সে আক্রান্ত বেশি হয়। তবে এ বছর আক্রান্ত হার গত বছরের তুলনায় বেশি। যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেক সময় অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী পক্সে আক্রান্ত হলে অন্যান্য হাসপাতাল থেকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিডনি রোগে আক্রান্ত ডায়ালাইসিস চলছে এমন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া কিছুটা মুশকিল হয়ে যায়। অনেক রোগীর আইসিইউর প্রয়োজন হয়। এই হাসপাতালে আইসিইউ প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। রোগীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনেক রোগী হাতুড়ে কিংবা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নেন। এসবের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অনেক রোগীর চামড়া পুড়ে গিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধপথ্য সেবন করতে হবে।’ এ রোগ প্রতিরোধে দুই ডোজের ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর। ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে এই টিকা শুরু করা যায়। তবে সরকার থেকে এসব টিকা দেওয়া হয় না, বাইরে থেকে রোগীকে কিনতে হয়। একবার এই রোগ হয়ে গেলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তাতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সর্বশেষ খবর