সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় একটি ভবনের নিচতলায় আয়নাঘরের মতো গোপন কক্ষে দুজনকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ‘আয়নাঘর’ থেকে পালিয়ে আসা নারী-পুরুষ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পল্লি চিকিৎসক ও স্থানীয় সাংবাদিক নাজমুল হোসেন আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার সোনারাম গ্রামের একটি পাকা ভবনের নিচতলার গোপন কক্ষ থেকে দুজন নিজেদের তৈরি সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে আসেন। পরদিন শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ভুক্তভোগী দুজন হলেন রায়গঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাইকড়া গ্রামের আবদুল জুব্বার (৭৫) এবং লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের শিল্পী বেগম (৪৮)। ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর এই দুজনকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। গতকাল দুপুরে আবদুল জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও শিল্পী বেগমের স্বামী মনসুর আলী খন্দকার বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। শফিকুলের মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। মনসুর আলীর মামলায় আসামির সংখ্যা ১৩ জন।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বন্দি থাকা অবস্থায় জুব্বারকে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। শিল্পী বেগমের মামলায় জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের অভিযোগ রয়েছে।’ তিনি বলেন, অভিযুক্ত আরাফাতকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শিল্পী বেগম অভিযোগ করেন, তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে টেপ দিয়ে মুখ বেঁধে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর আয়নাঘরের মতো গোপন ঘরে আটকে রাখা হয়। বারবার ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান রাখা হতো। একসময় তাঁকে জানানো হয়, ‘তোর কিডনি ও বাল্ব বিক্রি করমু, এটা আমাদের ব্যবসা।’
অন্যদিকে আবদুল জুব্বার বলেন, ওষুধ কেনার কথা বলে আরাফাত তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে এনে আটকে রাখেন। সেখানে তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় এবং জমি লিখে দেওয়ার জন্য নির্যাতন চালানো হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত আরাফাত ভবনের নিচতলায় ছোট ছোট কক্ষ নির্মাণ করে রাতে গোপনে লোকজন এনে রাখতেন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আরাফাত ও ভবন মালিক সুমনের বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আয়নাঘরের প্রমাণ সংরক্ষণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীরা যাতে ন্যায়বিচার পান, সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’