জংলি বেগুন। পথের ধারে ঝোপের পাশে জন্মে। সেই ফেলনা বেগুনের চারার সঙ্গে টম্যাটোর চারার জোড়া (গ্রাফটিং) লাগিয়ে বাজিমাত করেছেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কোরপাই গ্রামের যুবক মোবারক হোসেন।
শুক্রবার বিকালে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে ৩ একর জমিতে গ্রাফটিং করা টম্যাটোর চাষ করা হয়েছে। ওপরে পলিথিনের শেড দেওয়া। মাটির ওপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। একে মালচিং পদ্ধতি বলা হয়। মাঝে খোঁপে খোঁপে টম্যাটোর গাছ। জমিতে লাগানো হয়েছে জৈব বালাইনাশক হলুদ ট্র্যাপ। গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো পরিপক্ব হওয়ার পর বিক্রি শুরু হয়েছে। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এদিকে চারা তৈরি শেডে গ্রাফটিং করছেন জাহিদ হোসেনসহ কয়েকজন। তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন মোবারক হোসেন। জাহিদ হোসেন জানান, তিনি উদ্যোক্তা মোবারক হোসেনের নির্দেশায় এখানে কাজ করেন। রাতে সাধারণত জংলি বেগুনের সঙ্গে টম্যাটোর চারা জোড়া লাগানোর কাজটি করেন। মিনিটে ৩ থেকে ৪টি চারা জোড়া দেন। এক রাতে ১৮০০ থেকে ২০০০ চারা তৈরি করেন।
মোবারক হোসেন জানান, চার বছর ধরে তিনি জংলি বেগুনের সঙ্গে টম্যাটোর জোড়া লাগিয়ে চারা তৈরি করছেন। এ কাজ শুরুর পর অনেকে হাসাহাসি করেছেন। এখন সফলতা দেখে অন্যরাও আগ্রহী হয়েছেন। প্রতিটি চারা পাইকারি ১৫ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি ৬ লাখ চারা বিক্রি করেছেন। মাঠে সাড়ে ৩ একর জমিতে সাহু ও কানসাল জাতের টম্যাটো লাগিয়েছেন। তিনি বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করছেন। তার চারা, মাচা, মালচিং, সার ও শ্রমিক মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ লাখ টাকার মতো। তিনি আশা করছেন বিক্রি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া তিনি শীতকালীন আগাম টম্যাটো চাষের জন্য মঙ্গল রাজা নামের টম্যাটোর চারার গ্রাফটিং করছেন। সেগুলো আরও সাড়ে ৩ একর জমিতে চাষ করবেন। বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিনা আক্তার বলেন, আমরা উদ্বুদ্ধের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করছি। তাদের একজন মোবারক হোসেন। তিনি টম্যাটোর গ্রাফটিং করে সাড়া ফেলেছেন। তার চারা বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছে। তার কাছ থেকে কৃষি বিভাগও ৭০ হাজার টাকার চারা কিনেছে। এ ছাড়া তার টম্যাটোর মাঠে আমরা বিষমুক্ত উপায়ে চাষের জন্য জৈব বালাইনাশক সরবরাহ করেছি।
ওই মাঠ পরিদর্শনে এসেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ আজিজুর রহমান ও কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, মোবারক হোসেনের মাঠ দেখে ভালো লেগেছে। তিনি চারা ও টম্যাটোর জমি থেকে কোটি টাকার বেশি আয় করছেন। তাকে দেখে অন্য কৃষকরাও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। তার মতো উদ্যোক্তা বাড়লে দেশের কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।