রাজধানীবাসীর ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন বা ইন্টারসেকশন দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এতে বেশ খানিকটা সফলতাও এসেছে বলে মনে করছে তারা। তবে গাড়ির চালকরা বলছেন, নতুন ডাইভারশনে যানজট কিছুটা কমেছে; কিন্তু এতে কিছুটা পথ বাড়তি ঘুরতে হচ্ছে। পুলিশ বলছে, ডাইভারশন চালুতে বাড়তি পথ ঘুরতে হলেও কমেছে যানজটের তীব্রতা, সামান্য হলেও বেড়েছে গতি। কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছে নগরবাসী। ঢাকা শহরের ৭০ পয়েন্টে এমন ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আরও ডাইভারশন দেওয়া হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক, বর্তমানে প্রশাসন) মো. সরওয়ার যোগদানের পর নগরীর যানজট কমাতে এবং যানবাহনের গতি বাড়াতে ট্রাফিকব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন। তিনি রাজধানীর ৭০টি ইন্টারসেকশন নতুন করে বিন্যাস করেন। যেখানে কয়েকটি সিগন্যাল সেখানে এক-দুটি সিগন্যাল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া ইউটার্ন বৃদ্ধি করেন। এতে প্রতিটি মোড়ে যানজটে আটকে থাকার সময়সীমা কমে গেছে। পাশাপাশি গাড়ির চলাচলের গতিও খানিকটা বেড়েছে। এ ছাড়া এ সময় ভিডিও এবং ডিজিটাল মামলা বৃদ্ধি হওয়ায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা খানিকটা কমেছে।
ডিএমপি ট্রাফিকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘যেসব জায়গায় ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে ডাইভারশন করেছি, সেখানে আমরা সার্ভে করছি প্রকৃত অর্থে নগরবাসী উপকৃত হচ্ছে, নাকি কোনো সমস্যায় পড়ছে। যদি সমস্যা হয় তবে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা যে মডিফিকেশনগুলো করেছি, হয়তো যানবাহনগুলো ঘুরে আসতে কয়েক মিনিট লাগছে, তবে এতে যানবাহনের গতি বেড়েছে, কমেছে যানজট।’ ইন্টারসেকশনে পরিবর্তন, ভিডিও, ডিজিটাল মামলাসহ প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নতুন করে ঢেলে সাজানোর কারণে নগরীর চিরচেনা যানজটের চিত্র অনেকটা বদলে গেছে।
জানা যায়, রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক ইন্টারসেকশন বা মোড় হলো বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকলী, তেজগাঁও লাভ রোড মোড় ও ধোলাইপাড়। এসব মোড়ে যানজট ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন এসব মোড় সকাল থেকে রাত অবধি তীব্র যানজটে আটকা থাকত। এখানে যানজট কমাতে এবং যানবাহনের গতি বাড়াতে ইন্টারসেকশন নতুন করে বিন্যাস করা হয়। এসব জায়গায় দেওয়া হয়েছে ইউটার্ন। ঢাকায় যেসব ইন্টারসেকশনে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে বনানী কবরস্থান ক্রসিং, বিজয় সরণি ক্রসিং, বসিলা ক্রসিং, আড়ং ক্রসিং (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ), কাকলী ক্রসিং, যাত্রাবাড়ী ক্রসিং, ধোলাইপাড় ক্রসিং, মিন্টো রোড ক্রসিং, নিউমার্কেট ক্রসিং, তাঁতীবাজার ক্রসিং, তেজগাঁও লাভ রোড ক্রসিং, জমজম টাওয়ার ক্রসিং (উত্তরা), ময়লার মোড় ক্রসিং (সোনারগাঁ জনপথ, উত্তরা), শান্তিনগর ক্রসিং, রায়েরবাজার ক্রসিং, মগবাজার ক্রসিং, মৎস্য ভবন ক্রসিং, বেইলি রোড ক্রসিং, ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড মেট্রো ক্রসিং, স্টার কাবাব ক্রসিং, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পূর্ব মাথা ক্রসিং, পশ্চিম মাথা ক্রসিং, সাইন্সল্যাব ক্রসিং, শাহবাগ ক্রসিং, এলিফ্যান্ট রোড বাটা ক্রসিং, কাটাবন ক্রসিং, ধানমন্ডি ৩ নম্বর রোড ক্রসিং, ধানমন্ডি ৯ নম্বর রোড ক্রসিং, সোবহানবাগ মসজিদসংলগ্ন নতুন ইউটার্ন, মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকা, বাংলামোটর এলাকা, বাবুবাজার ক্রসিং, সিদ্দিকবাজার ক্রসিং, বংশাল ক্রসিং, গুলিস্তান ক্রসিং, গুলিস্তান লেভেল ক্রসিং, হানিফ ফ্লাইওভারের নিমতলী ও চানখাঁরপুল র্যাম্প ওয়ানওয়েকরণ, মালিবাগ ক্রসিং, আবুল হোটেল ক্রসিং, রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন ইউটার্ন, ওয়াপদা রোড ক্রসিং, বিটিভি গেটসংলগ্ন ইউটার্ন, বৌদ্ধ মন্দির ক্রসিং, মানিকনগর ক্রসিং, চট্টগ্রাম রোড থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার র্যাম্প, হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গোলাপবাগ নামার র্যাম্প, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার ক্রসিং, সায়েদাবাদ ব্রিজ, পোস্তগোলা এলাকা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ক্রসিং, শিয়া মসজিদ ক্রসিং, সাতরাস্তা ক্রসিং, রেইনবো ক্রসিং, ইন্দিরা রোড এলাকা, মিরপুর-১২ রেইনবো ক্রসিং, মাজার রোড ক্রসিং, মিরপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন ক্রসিং, টেকনিক্যাল ক্রসিং, গুলশান অ্যাভিনিউ ১০৯ নম্বর রোড ক্রসিং, ১২৩ নম্বর রোড ক্রসিং, হাতিরঝিল এক্সিট (পুরাতন আড়ংসংলগ্ন), মহাখালী/আমতলী ক্রসিং, বনানী-১০ নম্বর ক্রসিং, তিব্বত ক্রসিং, উত্তরা হাউস বিল্ডিং ক্রসিং, সোনারগাঁ জনপথ ইয়েলো গ্যাপ, বিজিবি, এয়ারপোর্ট রোড বাস-বে, জসীমউদ্দীন রোড বাস-বে এবং সোনারগাঁও হোটেল ক্রসিং।
এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন, প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ-১) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘যানজট নিরসনে আমরা রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে ট্রাফিক ডাইভারশন দিয়েছি। এর মাধ্যমে বেশ সফলতা আসছে। তবে কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে দু-একটি ডাইভারশন পাল্টানো হয়েছে।’