আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বন্ধ থাকা দূতাবাস আবার খোলার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। গতকাল আফগান তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকের পরে এ ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর ভারত সেখানে দূতাবাস বন্ধ করেছিল। তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। তবে গত কয়েক মাসে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এর মধ্যেই রাজধানী কাবুলে আবার পুরোদমে দূতাবাস চালুর ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত চার বছর ধরে কাবুলে দূতাবাসের বদলে ‘টেকনিক্যাল মিশন’ চালাচ্ছিল ভারত। ছোট শহরগুলোতে কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, সেই টেকনিক্যাল মিশনকেই পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় দূতাবাসে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমরা কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে ভারতীয় দূতাবাসের স্ট্যাটাসে উন্নীত করছি- ভারত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, সীমান্তগত অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক শেষে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি বলেন, ‘আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে। যোগাযোগ এবং বিনিময় বৃদ্ধি পাবে।’ ভারতকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ও আখ্যা দিয়েছেন তিনি। কাবুলে বর্তমানে চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্কসহ প্রায় ডজনখানেক দেশের দূতাবাস কার্যক্রম চালাচ্ছে। রাশিয়া তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি রাশিয়া সফর শেষের পর ছয় দিনের সফরে ভারত গেছেন এবং তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় আপাতত ছাড় দিয়েছে জাতিসংঘও। এটি ২০২১ সালের পর কোনো তালেবান মন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের পদক্ষেপটি পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছে। ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নীতি বিশেষজ্ঞ হার্শ পান্ত বলেন, ‘তালেবানকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করা নয়; সংখ্যালঘু ও নারীর অধিকার এবং মানবাধিকার নিয়ে ভারত বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট। তবে প্রয়োজনীয় বাস্তববাদের কারণে ভারত এই পদক্ষেপ করছে।’ মুত্তাকি বলেন, আফগানিস্তান অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার হতে দেবে না। জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারতের ‘প্রযুক্তিগত মিশন’ কাবুলে দূতাবাসে উন্নীত করা হচ্ছে। এটি আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি ভারতের পূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।’ নতুন দূতাবাসের কার্যক্রম শুরুর সময়সীমা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। -রয়টার্স