বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নতুন লাইসেন্স কিংবা লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ ছয় প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে হয়। কয়েক মাস বিভিন্ন দপ্তরের টেবিলে টেবিলে হাজারো রকমের তথ্য জমা দিয়ে লাইসেন্স মেলে এক বছরের। এ জটিলতা কাটিয়ে লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করতে মেয়াদ বাড়িয়ে এক প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে অবৈধ হাসপাতালের ছড়াছড়ি। এ হাসপাতালগুলোর
সেবার মান নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসার সেবার মান নিশ্চিতে নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করা জরুরি। কিন্তু হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সনদ নিতে অনেক সময় চলে যায়। এর প্রক্রিয়াও জটিল। ফলে অনেকেই অনুৎসাহিত হয় এবং দীর্ঘসূত্রতায় ফাইল আটকে থাকে। এ জটিলতা দূর করতে এক ছাতার নিচে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা চলছে। একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় এলে নতুন লাইসেন্সকরণ এবং লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে।’
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্র, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র, এনবিআরের ভ্যাট-ট্যাক্স জমার কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে এ-সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানো এবং একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করতে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট-ট্যাক্সের কাগজ, ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তিপত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। পরিবেশ ছাড়পত্রে কিছু জায়গায় হাসপাতাল এবং ইটভাটার জন্য একই ধরনের নীতিমালা রাখা হয়েছে। তাই এ প্রক্রিয়া সহজ করার একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন না করে এর মেয়াদ দুই-তিন বছর বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এতগুলো প্রতিষ্ঠান না ঘুরে পুরো প্রক্রিয়া একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধন করেছে ৬ হাজার ২৪টি। অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু বড় একটি অংশ লাইসেন্স নবায়নের আবেদনই করেনি। চিকিৎসাসংশ্লিষ্টরা জানান, লাইসেন্স গ্রহণে প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতির পাশাপাশি জটিল প্রক্রিয়াও অনীহা তৈরির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া অনেক জটিল। ছয় প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য তথ্য, সার্টিফিকেট জমা দিয়ে লাইসেন্স মেলে মাত্র এক বছরের জন্য। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আওতায় এলে এবং লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়লে ফাইলের জট খুলবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও লাইসেন্স নবায়নে উৎসাহিত হবে। এতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও বাড়বে।’