শরীরে পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ডিহাইড্রেশন। তীব্র গরমে শরীরের পানিশূন্যতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে যারা রোদে বের হন বা গরমের মধ্যে কাজ করেন। এছাড়া যারা খুব ব্যস্ত জীবনযাপন করেন, অজান্তেই তাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
ডিহাইড্রেশন হলো শরীরের পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতার একটি অবস্থা। অনেকেই ভাবেন, শুধু তৃষ্ণা লাগলেই বুঝি শরীর পানিশূন্য হয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তৃষ্ণা লাগা মানেই আপনি ইতোমধ্যেই হালকা ডিহাইড্রেইশন বা পানিশূন্যতার শিকার হয়েছেন। তাই শুধু তৃষ্ণা নয়, পানিশূন্যতার আরো কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ জেনে রাখা দরকার।
ডিহাইড্রেশনের কারণ-
আমাদের শরীরে ৭০ শতাংশ পানি। দেহে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এর চেয়ে কম পরিমাণে পানি পান করলেই শরীরে ড্রিহাইড্রেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরিমিত পানি পান না করা ছাড়াও ডায়রিয়া, অতিরিক্ত সূর্যের তাপে থাকা, অতিরিক্ত শরীর চর্চা, প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়ার কারণেও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ডিহাইড্রেশনের উপসর্গ বা লক্ষণ-
শরীরে ড্রিহাইড্রেশন সমস্যা থাকলে আপনার মধ্যে বেশকিছু উপসর্গ দেখা দেবে। এগুলো হলো-
১। মাথাব্যথা ও ঘোরা
২। বারবার জিহ্বা, গলা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া
৩। বারবার পানির পিপাসা পাওয়া
৪। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
৫। পেশিতে টান পড়া
৬। চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
৭। চোখের দৃষ্টিগত সমস্যা দেখা দেয়া
৮। হজমে সমস্যা হওয়া
৯। পরিপাক তন্ত্রের কাজ ব্যাহত হওয়া
১০। মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া, মূত্রের রং হলুদ হয়ে যাওয়া
১১। শারীরিক দুর্বলতা
১২। বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।
এছাড়াও শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে আপনার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যাবে। ত্বকে দেখা দেবে ব্রণের সমস্যা। ডিহাইড্রেশনের আরেকটি লক্ষণ হলো মুখের দুর্গন্ধ।
পানি আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আপনি পানি কম খেতে শুরু করলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অভাবে আপনার মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে।
শরীরে পানির অভাব হলে আপনি অল্পতেই ক্লান্তিবোধ করবেন। আপনার দেখা দেবে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা। এর ফলে আপনার হঠাৎ করেই হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডিহাইড্রেশন এড়াতে করণীয়
১। কিছুক্ষণ পরপর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
২। গরমে আমিষজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে ডায়েটে আমিষযুক্ত খাবার থাকলে নিশ্চিত করুন দৈনিক ৩ লিটার পানি গ্রহণের।
৩। তৃষ্ণা মেটাতে সোডা, শর্করাজাতীয় কোমল পানীয়, আইসক্রিম এড়িয়ে চলুন।
৪। খাবারে পানিসমৃদ্ধ ফল ও সবজি রাখুন। যেমন ডাব, তরমুজ, আনারস, লেবু, শসা, টমেটো, লাউ ইত্যাদি।
৫। প্রখর রোদে বাইরে বের হলে, খেলাধুলা করলে, ব্যায়াম কিংবা শারীরিক পরিশ্রমে ২০ মিনিট পরপর পানি বা শরবত পান করুন।
৬। গরমে হাই প্রোটিন ও অ্যালকোহলপূর্ণ খাবার বাদ দিতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ