৫ জুন, ২০২১ ১২:৩৮

ইয়েলোস্টোন: যেখানে চুরি, ডাকাতি এমনকি খুন করলেও নেই শাস্তি!

অনলাইন ডেস্ক

ইয়েলোস্টোন: যেখানে চুরি, ডাকাতি এমনকি খুন করলেও নেই শাস্তি!

এমন কোনও জায়গা রয়েছে যেখানে অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাওয়া যায়? এমন কোনও জায়গা রয়েছে যেখানে খুন করলেও দোষীর সাজা হয় না? শুনতে অবাক লাগলেও এমন জায়গা রয়েছে এই বিশ্বেই।

আক্ষরিক অর্থেই সেটি ‘জোন অব ডেথ’। আমেরিকার ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের ৫০ বর্গ মিটার এলাকা যা ইদাহো জেলার অধীন সেই এলাকাটিই হল ‘জোন অব ডেথ’।

আমেরিকার সংবিধানে আইনের এমন ফাঁক থেকে গিয়েছে যে এই ৫০ বর্গ মিটার এলাকায় কেউ খুন করেও সকলের সামনে দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যেতে পারবে। তার সাজাও হবে না।

আমেরিকার ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্য আসলে ইউমিং জেলা আদালতের অধীন। আবার ওই অরণ্যের মাত্র ওই ৫০ বর্গ মিটার এলাকা ছাড়া পুরোটাই ইউমিং জেলায় অন্তর্গত। শুধু ওই অংশটুকুই ইদাহো জেলার অন্তর্গত।

ষষ্ঠবার সংশোধিত আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, কোনও অপরাধমূলক অভিযোগের বিচার করার জন্য নির্বাচিত জুরিদের ওই রাজ্য এবং ওই জেলার নাগরিক হতে হবে।

এতেই গোল বাধে। এখানেই বিচারব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার কৌশল লুকিয়ে রয়েছে। পার্কের ওই ৫০ বর্গ মিটার অঞ্চল যা ইদাহোর অধীন কোনও মানুষের বসতিই নেই।

আসলে পার্কের মধ্যে ইদাহো জেলার যেটুকু অংশ আমেরিকার ইউমিং জেলা আদালতের আওতায় রয়েছে সেটি ‘নো ম্যান্‌স ল্যান্ড’।

সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, এই অঞ্চলে কোনও অপরাধ হলে তার বিচার করবেন ইদাহো জেলার ওই অঞ্চলের মধ্যে বাস করা জুরিরা।

এখন যেহেতু পার্কের অন্তর্গত ইদাহো জেলার অংশে কোনও বসতিই নেই, তাই সংবিধান অনুযায়ী এই অংশের অপরাধের বিচার করারও কেউ নেই। ফলে একজন খুন করেও পার পেয়ে যেতে পারে অবলীলায়।


এই অঞ্চলের বিচারব্যবস্থার ফাঁক প্রথম চোখে পড়ে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রায়ান সি কাল্টের।

তিনি দেখেন ওই অঞ্চলে জুরি গঠন করার জন্য কোনও নাগরিকই থাকেন না। ফলে যেকোনও ব্যক্তি মারাত্মক অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাবেন। এমনকি খুন করলেও সাজা দেওয়ার কোনও উপায় নেই।

প্রশাসনের নজর কাড়ার জন্য এই অঞ্চলকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেন কাল্ট। উপন্যাসের নাম দেন ‘দ্য পারফেক্ট ক্রাইম’।

২০০৫ সালে সেটি প্রকাশিত হয়। কাল্টের আশঙ্কা ছিল তার উপন্যাস পড়ার পর বিচারব্যবস্থার এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে অনেকেই অপরাধ করার জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিতে পারেন।


ওই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর কাল্ট ভেবেছিলেন প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে। আইনের এই ফাঁক ভরাট করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।

কাল্ট নিজেই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের ওই অংশটুকু ইউমিংয়ের অধীন থেকে মুক্ত করে তা ইদাহো জেলা আদালতের অধীন করার আবেদন করেন তিনি। আইনজীবীও পাত্তা দেননি কাল্টকে।

২০০৭ সালে এই অঞ্চল নিয়ে আরও উপন্যাস প্রকাশিত হয়। লেখক সি জে বক্স সেটি লিখেছিলেন। নাম দেন ‘ফ্রি ফায়ার’। প্রশাসনের নজর কাড়তে সফল হয় এই উপন্যাসটি। উইমিংয়ের সেনেটর মাইক এনজি এই ফাঁক বন্ধ করতে সচেষ্টও হয়েছিলেন। কিন্তু তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনিও।

তবে আইনের ফাঁকফোকর সামনে আসার পরও তেমন কোনও অপরাধ ঘটেনি এই অঞ্চলে। ২০০৭ সালে বক্সের উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর এক চোরাশিকারি জেনেবুঝেই এখানে ইক প্রজাতির একটি হরিণ শিকার করেন।

এই মামলার শুনানি চলে উইমিং জেলা আদালতে। কিন্তু আইন অনুযায়ী তা হওয়ার কথা ছিল না। এর পর অভিযুক্ত শিকারি লেখক কাল্টের উপন্যাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এর বিরোধিতা করেন। যদিও তাতে কাজ হয়নি। বিচারকেরা তার যুক্তিকে গুরুত্ব দেননি। তবে জামিন পেতে তার কোনও অসুবিধা হয়নি।

সেই আইনের ফাঁক আজও একইভাবে থেকে গিয়েছে। তবে এই ফাঁক কাজে লাগিয়ে নিরন্তর অপরাধের কথা সামনে আসে না। সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর