বিয়ে করে নতুন জীবনে পা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গতকাল শুক্রবার পাত্রী দেখতে রওনা হয়েছিলেন রং মিস্ত্রি আল-আমিন (২৮)। সঙ্গে খালা-খালুসহ আরও পাঁচজন। হাজারীবাগের বউবাজার থেকে সবাইকে নিয়ে গ্লোরি পরিবহনে রওনা দেন। পাত্রীর বাড়ি রূপগঞ্জের বড়পা এলাকায়। কিন্তু পাত্রীর বাড়ি পর্যন্ত আর পৌঁছানো হল না আল-আমিনের। পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে স্বজনদের নিয়ে ঠাঁই হল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ণ ইউনিটে।
আল-আমিন অবশ্য জানালার ফাঁক দিয়ে নেমে আসতে পেরেছিলেন। তাই আগুনের ক্ষতটা তেমন নয়। কিন্তু বাসের মধ্যেই আগুনে পুড়তে হয় তার দুই খালু মোজাফ্ফর হোসেন (৬১) ও শাহজাহান সরদারকে (৫৫)।
আল-আমিন বলেন, 'বাসটা চলন্ত অবস্থায় ছিল। ঘটনাস্থল ছিল কিছুটা অন্ধকার। আমি বাসের বাঁ পাশের সিটে জানালার পাশে ছিলাম। হঠাৎ বাসের সামনের লাইটের আলোতেই দেখলাম দুইটা ছেলে কী যেন একটা ছুড়ে মেরে দৌঁড় দিল। সঙ্গে সঙ্গে দেখি আগুন আর আগুন। আমি জানালা দিয়ে নেমে পড়ি। কিন্তু আমার দুই খালু দগ্ধ হন। আরও অনেক মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়। হুড়োহুড়ি আর চিৎকার-চেচামেচির মধ্যে আমি আমার সঙ্গের সবাইকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।'
উল্লেখ্য, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কাঠের পুল এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা ও ককটেল হামলা করে দুষ্কৃতিকারীরা। পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন ২৯ যাত্রী। এদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আংশকাজনক বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ণ ইউনিটের ডাক্তারা জানিয়েছেন।
ঘটনার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে ঢামেকের বার্ণ ইউনিটের প্রফেসর সাজ্জাত খন্দকার জানিয়েছেন, যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আংশাজনক। তাদের শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া বাকি ২০ জনের শরীরের ২০ থেকে ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বাস থেকে বের হতে গিয়ে অনেকের হাত পা ভেঙ্গে গেছে। অনেকের চিকিৎসার জন্য দ্রুত রক্তের প্রয়োজন। অনেকের অবস্থা গুরুতর।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ