মিয়ানমারের কারাগার থেকে সাজা ভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি নাগরিক। বুধবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সাজা ভোগকারীদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেন মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রতিনিধি দল। সাজাপ্রাপ্তরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় আটক হয়েছিলেন।
ফেরত আসা কারাবন্দিরা হচ্ছেন, চট্টগ্রাম জেলার বশিরা এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে বদিউল আলম, একই জেলার বাঁশখালী সরল বাজার এলাকার আয়ুব আলী ছেলে জামাল উদ্দিন, একই জেলার নেটা ফকির পাড়া এলাকার ওয়াসি উর রহমানের ছেলে মো. হেলাল, খাগড়াছড়ি জেলার বড়দোলা কুনজুরি পাড়া এলাকার অং জো মারমার ছেলে সে থু অং মারমা, একই এলাকার মং প্রু মারমার ছেলে ইউ সা খ মারমা, টেকনাফ উপজেলা উত্তর শিলখালী এলাকার আব্দুস শুক্কুরের ছেলে রহিম উল্লাহ, একই এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মুফিজুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে আজিজুল ইনলাম, কক্সবাজার জেলা রামু দক্ষিণ কলাতলি এলাকার মো সামির ছেলে মো. শফিক, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিল এলাকার মো. সব্বির আহমেদের ছেলে মো শাকের, কক্সবাজার ঘোনা পাড়া এলাকার আজগর আলীর ছেলে মো. জালার উদ্দিন,সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখারী এলাকার আব্দুল আমিনের ছেলে মিজানুর রহমান, হারিয়াখারী এলাকার আব্দু রশিদের ছেলে আজিজুল্লাহ, আব্দুল মাজিদের ছেলে আব্দুস সালাম, একই ইউনিয়নের লাফারঘোনা এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে নুরুল আলম, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকার মৃত আব্দুল কাদের ছেলে মো. জালাল এবং একই এলাকার মৃত সেতাব্বর এর ছেলে আবু তাহের।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, মংডুতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ-জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার মংডুর অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তা হটেন লিনেন’র নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরত নাগরিকদের নিয়ে সদর বিওপি চৌকির সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার টেকনাফ নতুন ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, টেকনাফ-২ বিজিবির মেজর মামুনুর রশিদ, স্টাফ অফিসার মোহাম্মদ জোবাইর আহমদ, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার, জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি)’র প্রতিনিধি পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি টেকনাফ মডেল থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ভূইয়া, বিজিবির সুবেদার মোহাম্মদ ইব্ররাহীম হোসেন, স্টাফ অফিসার নায়েক সহকারী সরোয়ার আলম, মেডিকেল অফিসার শরীফুল ইসলাম, দোভাসী কবির হোসেন প্রমুখ।
পরে দুপুর ১টায় ওই জেটিতে ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী সংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এসব ব্যক্তিরা মিয়ানমারের বিভিন্ন সময় আটক হয়েছিল। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষে দেশে এদের ফেরত আনা হয়েছে। এর আগে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর বৈঠকের মাধ্যমে এদের ফেরত আনা হয়। ফেরত আনা ব্যক্তিদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফেরত আসাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সেদেশের কারাগারে আরও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও ফেরত আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস জানান, ফেরত আনা ১৭ বাংলাদেশিকে যাচাই-বাছাই করে পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হবে।
ফেরত আসা জালাল উদ্দিন জানান, গত সাত মাস আগে টেকনাফের শামলাপুর এলাকায় দিয়ে ট্রলার যোগে মালয়েশিয়া যাবার জন্য সাগর পথে পাড়ি জমাই। মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ৩/৪ দিন সাগরে ভাসার পর মিয়ানমার সীমান্তের দিকে ভেসে গেলে সে দেশের সেনারা আমাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশী নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরকে আলাদা করে মংডু কারাগারে রাখা হয়। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করেন।
ফেরত আসা সে থু অং মারামা জানান, দেড় বছর আগে তারা চাচা ভাতিজা মিয়ানমার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেড় বছরের করে সাজা প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল