রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদের দণ্ড বহাল রেখেছেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ডিত এএসআই মো. রাশেদুল হাসানকে ১০ বছর দণ্ড ও সোর্স রাসেলকে সাত বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন।
গতকাল বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে গত রবিবার রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত।
এ মামলায় আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সরওয়ার আহমেদ, মো. আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার। মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম ও শাহীনুজ্জামান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার সাংবাদিকদের জানান, এসআই জাহিদের যাবজ্জীবন দণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বহাল রেখেছেন। এএসআই রাশেদুল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ১০ বছরের দণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসেলকে সাত বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন।
এ মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের সাবেক তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. রাশেদুল হাসান, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু। এ ছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই তিন আসামির প্রত্যেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। এ মামলায় পুলিশের সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর জাহিদ, রাশেদ ও রাসেল হাই কোর্টে পৃথক আপিল করেন। এ তিন আপিলের শুনানি একসঙ্গে গত ৯ জুলাই শুনানি শুরু হয়। গত ৭ আগস্ট শুনানি শেষে রায়ের জন্য রবিবার দিন রাখা হয়। তবে এএসআই কামরুজ্জামান শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। আর সুমন কারাভোগ করে বেরিয়েছেন।
মামলার আর্জি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় নিহত জনি ও তার ভাই ইমতিয়াজ সোর্স সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে তিনি পুলিশকে ফোনকল দেন। পুলিশ এসে জনিকে আটক করে নেয়। আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জনির মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর অধীনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। এ আইনে এটি ছিল প্রথম মামলা ও প্রথম রায়। যে আইন করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বাতিলের দাবি ছিল।