যতোই ঘনিয়ে আসছে ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচন ততোই যেনো বিজয়ের দিকে হাটছেন প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও বো-আসনের প্রার্থী সাবেক সাংসদ রোশনারা আলী ও শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের আসনের প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক।
এই দুই বাংলাদেশী প্রার্থীকে নিয়ে বাংলা কমিউনিটির গণ্ডি ছাড়িয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে মূলধারার রাজনীতি ও মিডিয়ায়। বাংলাদেশীদের মধ্যে তো আছেই, এই আলোচনা এখন ব্রিটিশ নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে- দুজনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন আর সামাজিক, রাজনৈতিক ও কমিউনিটির সাথে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে। ব্রিটেনের মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোর মধ্যে গার্ডিয়ান, টাইমস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডেইলি মেইল, এক্সপ্রেস, সান, মিরর- নির্বাচনকালীন বিভিন্ন খবরে তাদের সম্ভাবনার তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশী এই দুই প্রার্থীকে। ব্রিটেনে টাইমস, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সমর্থন যে সব দলের দিকে বেশী থাকে, সেই দলের পাল্লা ভারী হয়, নির্বাচনী ফলাফলও সেই দলের দিকে যায়। ভোট ব্যাংকের বাইরে যে স্যুইং ভোট থাকে, সেই ভোট এই পত্রিকাগুলো তাদের দলের জন্য প্রভাবিত করতে পারে।
বেথনাল গ্রিন ও বো আসনে রোশনারা আলী গত নির্বাচনেও ৪৩% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। বিগত ইরাক ইস্যুতে শ্যাডো মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে রোশনারা যুগান্তকারি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বেথনাল গ্রিন-বো আসনের অগ্রিম নির্বাচনী ফলাফল সেটাই বলে দিচ্ছে। আর মূলধারার রাজনীতিতে বলাবলি এখন তুঙ্গে। লেবার দল যদি ক্ষমতায় যায় কিংবা স্কটিশ লেবার পার্টির সাথে ভোট ভাগাভাগি করে সরকার গঠন করে- রোশনারা পেয়ে যাবেন কেবিনেটে সম্মানী পদ- এমন ঘোষণাও দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সর্বশেষ জনমত জরিপ আর ব্রিটেনের প্রভাবশালী সকল মিডিয়ায় রোশনারা জয়- ধরে নিয়েই হিসাব কষা শুরু হয়ে গেছে।
এমন নির্বাচনী যোগ-বিয়োগ যখন রাজনৈতিক পণ্ডিতদের টেবিলে, ঠিক তখনি হ্যাম্পস্ট্যাড ও কিলবার্ন আসনের লেবারের আরও এক বাঙালি প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিকীকে খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর নাতনী পরিচয়ে সচিত্র এক বিশাল সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। একই ধরনের ফিচার ইতোমধ্যে করেছিলো গার্ডিয়ানও। টিউলিপ সিদ্দিকীর আসনে আগে যিনি এমপি ছিলেন তিনি হলেন দুইবারের অস্কার বিজয়ী গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন। বিগত নির্বাচনে এই আসনে গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন ১৭,৩৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে খুব মার্জিন ভোট মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছিলেন কনজারভেটিভ প্রার্থীর চেয়ে। রোশনারার আসন যেভাবে লেবারের ভোট ব্যাংকের বলা যায় প্রায় স্থায়ী আসন, তেমনি টিউলিপের আসনও ভোট ব্যাংকের হিসেবে লেবারের আসন। তবে পার্থক্য হলো রোশনারার আসন সংখ্যাগরিষ্টতার অংকে এগিয়ে, আর টিউলিপের আসন সংখ্যাগরিষ্টতার হিসেবে নয় বরং মার্জিন ভোটের হিসেবে এগিয়ে। তবে নির্বাচন ক্যাম্পেইনে টিউলিপ এখন পর্যন্ত এগিয়ে এবং মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকার সমর্থনও তার পেছনে। সেই হিসেবে মূলধারায় মার্জিন ভোটে লেবারের এই তরুণ প্রার্থী যে এগিয়ে যেতে পারেন- সেই হিসেব কিন্তু এখনি কষা হচ্ছে।
সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাথে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে টিউলিপ সিদ্দিকী নিজের আশা আখাঙ্ক্ষা এবং চাওয়া পাওয়া ও ভোটের হিসাব নিকেষ খুলাখুলি তুলে ধরেছেন। ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক সায়মন উসবর্ণ টিউলিপের সাক্ষাৎকার যখন নেন, তখন টিউলিপ ব্যস্ত নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে। সায়মন সাক্ষাতকারের ফাঁকে ফাঁকে টিউলিপের পরিচিতিও এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, বিশ্বের একপ্রান্তে সব চাইতে ডেমোক্রেটিক এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে যিনি লেবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন, অপরদিকে সেই একই সিদ্দিক বিশ্বের অপর প্রান্তের ১৬ কোটি জনগণের নেতা এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোনের মেয়ে এই টিউলিপ সিদ্দিকী। একইসাথে নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এসোসিনেশনের কাহিনীও কিঞ্চিৎভাবে এমনভাবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেজন্যেই ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাথে সাক্ষাৎকারে যথার্থই তিনি বলেছেন, আমি লেবার করি, কারণ ইট স্পোক টু মাই ভ্যালুস।
সর্বশেষ ইউগভ আর মরিস জনমত জরিপ টিউলিপ আর রোশনারার বিজয়ের চিহ্ন ভেসে উঠছে। দু'জনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের শত কষ্টের মধ্যেও ঠোটের কোণে হাসির রেখাই আম-জনতার লেবারের ভোটারদের জয়ের কথাই বলে দেয়। দু'জনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে বিগত ১২ সপ্তাহ দৌড়-ঝাঁপের মধ্য দিয়ে ভোটারদের মনে যে আস্থার বহিঃপ্রকাশ দেখেছি, আর জনমত জরিপে যে ফলাফল আসছে, নাটকীয় কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হলে ৭ মের নির্বাচনে দুই বাঙালি ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন- বাংলাদেশির কমিউনিটির অনেকেই এখন সেভাবেই বলাবলি করছেন, যেমন করছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং গার্ডিয়ান।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ মার্চ, ২০১৫/মাহবুব