নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। সোমবার শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টিইইইএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য হিসেবে) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর পৌঁছে গেল এক নতুন উচ্চতায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর আমদানি, রফতানি ও খালি কনটেইনার মিলিয়ে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস হ্যান্ডলিং করেছিল।
এদিকে কার্গো হ্যান্ডলিং এবং জাহাজের আগমনও বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ইতিহাসে এর আগে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। ওই বছর ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড হয়েছিল। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন মাইলফলক গড়তে সক্ষম হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কনটেইনারবাহী জাহাজের মাধ্যমে ২৩ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। বাকি ৭৭ শতাংশ হয় বাল্ক বা হ্যাচযুক্ত জাহাজে। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথম কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়েছিল।
বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই সাফল্যের মূলে রয়েছে বন্দর পরিচালনা-সংশ্লিষ্টদের সঠিক নির্দেশনা ও তদারকি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা। এছাড়া বন্দরের অটোমেশন সার্ভিস সুবিধা, ই-গেট পাস চালু, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নও হ্যান্ডলিং কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। একইসঙ্গে দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়াসহ নানা কাজে বন্দর ব্যবহারকারীদেরও সার্বিক সহযোগিতা ছিল।
শুধু কনটেইনারে নয়, প্রবৃদ্ধি ঘটেছে কার্গোতেও। বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। আগের অর্থ বছরে যা ছিল ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ ভিড়েছে। আগের বছর এসেছিল ৩ হাজার ৯৭১টি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে। শিপিং বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বন্দরের মধ্যে কনটেইনার ওঠানামার দিকে থেকে এ বন্দরের অবস্থান ৬৭তম।
বন্দর সূত্রের দাবি, নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গত অর্থবছরে দেশের লাইফলাইন খ্যাত এ বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বড় সাফল্য এসেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, দুই ঈদের লম্বা ছুটি, কাস্টম হাউসে কর্মবিরতি, পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা পরিস্থিতির কারণে এ বছর প্রায় ৬২ দিন হ্যান্ডলিং বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এসব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই