টানা দু’বছরের দর-কষাকষির পর ২ আগস্ট নিউইয়র্ক সময় রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ২৪ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দফতরে অভাবনীয় সাফল্য এলো ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে দারিদ্র মুক্ত, সম্ভাবনাগুলোকে প্রমোট করা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং নিরাপদে বসবাসের উপযোগী বিশ্ব গড়ার ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ শীর্ষক এই ১৭টি প্রস্তাবের অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশের।
‘জাতিসংঘে বিভিন্ন ফোরামে টেকসই উন্নয়ন পরিক্রমায় খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানী নিরাপত্তা, টেকনোলজি ট্র্যান্সফার, পরিবেশ সুরক্ষা, সুষম উন্নয়ন, দারিদ্র-বিমোচনসহ মোট ১৯টি প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশের। এগুলোকে জাতিসংঘের এজেন্ডায় পরিণত করতে বাংলাদেশকে নিরন্তরভাবে কাজ করতে হয়। ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক এর মধ্যে ১৫টি জাতিসংঘের এজেন্ডা হিসেবে গৃহিত হওয়ায় আমরা যারপর নাই খুশী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির কার্যক্রম আজ জাতিসংঘের সামনের ১৫ বছরের উন্নয়ন লক্ষ্যে পরিণত করার ‘খসরা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো-যা বাংলাদেশের জন্যে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা’-দাবি করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এ বছরে সমাপ্ত হতে যাওয়া ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য’ এর অগ্রগতির ধারা আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ নির্ধারণ’র জন্যে গৃহিত এই ১৭টি এজেন্ডাকে চূড়ান্ত রেজ্যুলেশন আকারে গ্রহণের জন্যে আসছে সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে ৩দিনব্যাপী ‘টেকসই উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ সদর দফতরে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদিসহ ১৫০ দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীসহ ১৯৩ দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নেবেন।’
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’-এর ১৭ খসরা প্রস্তাবকে জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের এ বিশ্বকে এগিয়ে নিতে ‘ট্র্যান্সফর্মিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড : দ্য ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ (“Transforming our World: The 2030 Agenda for Sustainable Development” ) জনগণের এজেন্ডা হিসেবে কাজ করবে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, এসব এজেন্ডা স্থিরিকরণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন, তা আমাকে অভিভূত করেছে। মানবতার সত্যিকারের কল্যানে এমন মানসিকতা সদা জাগ্রত রাখতে হবে। একইভাবে বিশ্বের সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে টেকসই উন্নয়নের এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে।’
এদিকে রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন উল্লেখ করেন, ‘অভিবাসী সমাজের মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের প্রস্তাবটি ঐ এজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ নিয়ে আমি জোরালো যুক্তি উপস্থাপনকালে বলতে বাধ্য হই যে, ‘বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিকেরা নিগৃহিত, লাঞ্ছিত হচ্ছেন, শ্রমের যথাযথ মূল্য পাচ্ছেন না। এসব কঠোর পরিশ্রমী মানুষদের কল্যাণের ব্যাপারটি যদি নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তাহলে এটি হবে জাতিসংঘের জন্যে বড়ই লজ্জার ব্যাপার। আমার এমন মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন আরো ৩৬ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। তবুও এজেন্ডা হিসেবে নেয়া হয়নি।’