অনিয়ম, দুর্নীতি আর সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বন্ধ হতে বসেছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী স্কুল 'বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ' রিয়াদ বাংলা শাখা। "নো লস নো প্রফিট" নীতিতে চলা স্কুলটিতে একসময় বিপুল পরিমাণ অর্থ রিজার্ভ থাকলেও বর্তমানে অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
প্রতি তিনবছর পর পর স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোটে প্রকৃত অভিভাবকদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ গঠন এবং প্রতি বছর অভিভাবক সমাবেশে স্কুলের আয়-ব্যয় এবং সমস্যা সম্ভাবনা জানানোর কথা থাকলেও বিগত চার বছরে এই কিছুই মানা হয়নি। পরিচালনা পর্ষদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই মূলত আজকের স্কুলের এই দুরবস্থা। অভিযোগ রয়েছে স্কুলের অনিয়ম-দুর্নীতি আর বর্তমান কমিটির বিপক্ষে কথা বললেই চাকরি হারাতে হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের।
শুধু স্কুলের রিজার্ভ ফান্ডই নয়, সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া ৬৩ জন নতুন শিক্ষকের কাছ থেকে জামানত বাবদ ১১,২৫০ রিয়াল করে আদায়কৃত ৭ লক্ষাধিক রিয়ালও খরচ করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে স্কুল পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে। অভিভাবক এবং শিক্ষকরা বলছেন, সুন্দরভাবে চলা এই স্কুলের বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী স্কুলের বর্তমান পরিচালনা পরিষদ। তাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার জন্য আজকে বন্ধ হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি। অনৈতিকভাবে খরচ করা অর্থের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে কোন আলাপ-আলোচনা না করেই ছাত্র/ছাত্রীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একজন অভিভাবক বলেন, যেহেতু অভিভাবকদের টাকায় এই স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে তাই অভিভাবকদের মূল্যায়ন থাকবে না কেন? কেন বেতন বাড়ানোর আগে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা হবে না? প্রবাসের মাটিতে এমন অনেক অভিভাবক আছেন যাদের ৪-৫টি ছেলে-মেয়ে রয়েছে স্কুলে। হুট করে বেতনসহ যাবতীয় ফি দ্বিগুণ করে দিলে তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে যায়।
অযৌক্তিকভাবে বিপুল সংখ্যক নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পুরাতন অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বিদায় করে দেয়ায় স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন শিক্ষকদের তুলনায় পুরাতন শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা কোন অংশেই কম নয়, তারপরেও কেন নতুন শিক্ষক নিয়োগ এই প্রশ্নও রেখেছেন বিতাড়িত শিক্ষকরা।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে স্কুল থেকে বিদায় নেয়া শিক্ষক নাছির উদ্দিনকে ১০ হাজার, সামসুল আলম খানকে ১০ হাজার এবং মঞ্জুর আলমকে অতিরিক্ত রিয়াল দেওয়া হয়েছে, আবার একই স্কুলে কয়েকজনকে তাদের পাওনা রিয়াল না দিয়েই বিদায় দেয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডাক্তার জাকিউল হাসান বলেন, “আমাদের টাইম শেষ, কিছু জানতে হলে নতুন যারা আসবে তাদের কাছ থেকে জেনে নিবেন”। দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "গতমাসে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, আমাদের টাইম শেষ।"
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ