যেকোন অনুষ্ঠানে আয়োজকরা দর্শক-শ্রোতা খুঁজেন, দর্শক-শ্রোতাদের টানতে নানাভাবে প্রচারনা চালান, কিন্তু দর্শক-শ্রোতাদের’ অনুষ্ঠানে আসতে নিরুৎসাহিত করেন এমন ঘটনাও কী ঘটে? হ্যাঁ ঘটে । টরেন্টো শহরে এই ঘটনা ঘটছে কয়েক বছর ধরে, এবারও তাত ব্যতিক্রম হয়নি। আর এই ব্যতিক্রমী ঘটনার নজির স্থাপন করেছে কানাডার বাংলা টেলিভিশনের মঞ্চ আয়োজন- ’সুরের ধারা-৭’।
অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন আয়োজকরা ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তারা কোনো ‘ওয়াক ইন ‘ দর্শকদের জায়গা দিতে পারবেন না। যারা আগে থেকে আমন্ত্রন পত্র নিয়েছেন কেবল তাদের জন্যই এই অনুষ্ঠানে আসন সংরক্ষিত থাকবে। তারমানে হঠাৎ অডিটরিয়ামে গিয়ে কিছুক্ষণ গান শুনে গল্প গুজব করে সময় কাটানো দর্শকদের অনুষ্ঠানে না যেতে বিনয়ের সাথে নিষেধ করে দিয়েছেন আয়োজকরা।
এটাও কম সাহসের ব্যাপার না। নিজেদের আয়োজনের দক্ষতা, পেশাদারিত্বের ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থা না থাকলে এটি সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাংলা টেলিভিশন তাদের পরিবেশনার মাধ্যমেই এই আস্থার প্রমান দিয়েছে।
গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলা টেলিভিশন কানাডা’র মঞ্চ আয়োজন “সুরের ধারা” সিরিজের ৭ম পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসে শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি প্রসার ও প্রচার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলা টেলিভিশন কানাডা’র ধারাবাহিক এ আয়োজন। টরন্টো’র মূলধারার অন্যতম সম্মানজনক ফেয়ারভিউ থিয়েটার অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘সুরের ধারা -০৭’ শিরোনামের এবারের পরিবেশনাটি ছিলো দুটি পর্বে বিভক্ত।
প্রথম পর্বে কন্ঠশিল্পী বিজয় চক্রবর্তী ও অমিত রায় পরিবেশন করেছেন রাগাশ্রীত ১২টি বাংলা গান এবং দ্বিতীয় পর্বে পুরোনো দিনের জনপ্রিয় ১২টি গান গেয়েছেন শংকর চক্রবর্তী ও জয়া চক্রবর্তী। মার্গীয় সঙ্গীতে সুশিক্ষিত এবং পরিবেশনায় সুদক্ষ, ললিত কন্ঠের অধিকারী শিল্পীবৃন্দের গীত গানগুলো শ্রোতারা প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সহযোগিতা করেছেন তবলায় দোলন সিনহা ও সজীব চৌধুরী, কী-বোর্ডে মামুন কায়সার এবং মন্দিরায় অলক মুখার্জী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ফ্লোরা শুচি এবং শিল্পসজ্জায় ছিলেন চিত্রশিল্পী নুরুন্নাহার সুপ্তি। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হাফিজ আল আসাদ। নেপথ্যে থেকে অনুষ্ঠানটিকে সচল রেখেছিলেন সুমু হক, ফ্লোরা শুচি, নুরুন্নাহার সুপ্তি, ঈশিতা শামস, ফারহানা ইয়াসমিন গল্প, দেবযানী রায় চৌধুরী ও সাজ্জাদ আলী।
অনুষ্ঠানে কোনো প্রবেশ মূল্য রাখা না হলেও এটি ঠিক সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। কেবলমাত্র আমন্ত্রিত শ্রোতাদের জন্য নির্ধারিত থাকায় বিপুল সংখ্যক দর্শক শ্রোতা আগাম আমন্ত্রন সংগ্রহ করে আয়োজকদের শর্ত পূরণ করেই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে হলে পৌঁছা, নিজ নিজ আসনে বসে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করে, পাশের বন্ধুর সংগে খোশগল্প না করার মতো শর্তগুলো সানন্দে অনুসরন করেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো গান শেনেছেন সমবেত দর্শক শ্রোতা।
উল্লেখ্য, সুরের ধারা এবং অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাটেলিভিশন কানাডা অনুষ্ঠানের ভিন্ন একটি ধারার জন্ম দিয়েছে প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। দর্শক শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসাসিক্ত একটি সফল আয়োজনের পরও বাংলা টেলিভিশন কানাডার বিনম্র প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে জানিয়েছে, “ভাল গান, তৃপ্ত শ্রোতা, শুদ্ধ সংস্কৃতি, বাংলা টিভি’র প্রতিশ্রুতি" -এই লক্ষ্যে পথ চলায় আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। সংগীতের চর্চ্চা ও বিকাশে যারা সহমত পোষণ করেন, বাংলা টেলিভিশন কানাডা তাদের সাথে একযোগে কাজ করবে। সাংস্কৃতিক সুস্থতা বিনির্মাণে আমরা সকলের সাহায্য প্রার্থণা করি।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত