প্রবল বর্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভ করা হলো আমাজনের আগ্রাসী তৎপরতার নিন্দা এবং নিউইয়র্কে আমাজনের দ্বিতীয় সদর দফতর স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল করার দাবিতে। নিউইয়র্ক এবং ভার্জিনিয়ায় আমাজনের দুটি সদর দফতর স্থাপনের পরিকল্পনা জানাজানি হবার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মানবাধিকার সংস্থা, অভিবাসন সংস্থা এবং সুশীল সমাজের লোকজন।
তাদের ধারণা নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর লং আইল্যান্ড সিটিতে আমাজনের দ্বিতীয় সদর দফতর স্থাপিত হলে এ এলাকার বাড়ি ভাড়া বাড়বে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ত্বরান্বিত হবে। স্বল্প ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিবাসীদের পক্ষে কুইন্সে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ এই কুৃইন্স বরোকে বলা হয় আমেরিকার সবচেয়ে অধিক ভাষা, বর্ণ, অঞ্চলের মানুষের স্বর্গরাজ্য। সেই বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও ক্ষুব্ধ লোকজন উল্লেখ করেন।
২৬ নভেম্বর সোমবার ছিল আমাজনের সদর দফতর নিউইয়র্কে স্থাপনের প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। এদিন দুপুরে মিডটাউন ম্যানহাটানে আমাজনের লাইব্রেরির ভেতরে এবং তারও আগে বিশ্বখ্যাত মেসি স্টোরের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অঝোর ধারার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শতশত মানুষ পোস্টার-প্লেকার্ড-ব্যানার হাতে জড়ো হয় লং আইল্যান্ডে সদর দফতরের প্রস্তাবিত স্থানে।
এ বিক্ষোভে শিশুরাও ছিল মায়ের কোলে। বাংলাদেশিরাও ছিলেন সরব। টানা দু’ঘণ্টার বিক্ষোভে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো এবং রাজ্য গভর্নর এন্ড্র্যু ক্যুমোর সমালোচনা করে দক্ষিণ এশিয়ানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ড্রাম’র সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়েছি গভর্নর এবং সিটি মেয়রের আচরণে। ট্রিলিয়ন ডলারের এ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ট্যাক্স ব্রেক দেয়া হচ্ছে নিউইয়র্কে সদর দফতর স্থাপনের জন্য। তারা দু’জনই ডেমক্র্যাট। অথচ তারা অভিবাসী সমাজের পেটে লাথি দেয়ার মত আচরণ করছেন। আমাজনের অফিস স্থাপিত হলে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করা হলেও এই বিরাট সংখ্যক মানুষের আবাসিক সমস্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। এক পর্যায়ে এই ২৫ হাজার মানুষ আশপাশে বামা/এপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে থাকলে রাতারাতি বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাবে।’
ফৌজিয়া অভিযোগ করেন, ‘এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের অভিবাসীদের পক্ষে অধিক ভাড়া দিয়ে এ এলাকায় বাস করা সম্ভব হবে না। এজন্যেই আমরা মেয়র ও গভর্নরের প্রতি আহবান রেখেছি অবিলম্বে আমাজনের সদর দফতর স্থাপনের অনুমতি বাতিলের জন্য।’
দু’সপ্তাহ আগে রাজ্য গভর্নর এবং সিটি মেয়রের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আড়াই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৪০ লাখ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি ক্যাম্পাস নির্মাণ করবে আমাজন। সেটি হবে লং আইল্যান্ড সিটির প্রাণকেন্দ্রে।
‘মেইক দ্য রোড নিউইয়র্ক’ নামক আরেকটি সংস্থার কর্ণধার এঞ্জেলেস সলিস বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ জনতার আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। আমাদের এ আন্দোলনও সফল হবেই। কারণ, ক্রমান্বয়ে এ আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, মেহনতি মানুষ আর কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীরা।’
এশিয়ান আমেরিকান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্যাভ’র নির্বাহী পরিচালক সাশা উইজয়ারত্নে ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘কুইন্সের অধিবাসীদের সজাগ থাকতে হবে তাদের এলাকায় কী হচ্ছে সে ব্যাপারে। আমাজনের দফতর স্থাপিত হলে যে ধরনের দুর্দশার শিকার হবেন, তা কোনভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এজন্যে এখনই সকলকে সোচ্চার হতে হবে এই আগ্রাসী তৎপরতা রুখে দিতে।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন