জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন হাই কমিশন আয়োজিত এক স্মারক অনুষ্ঠান অুনষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও এমপিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
এ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ব্রিটিশ মিনিস্টার ফর লন্ডন এবং স্মল বিজনেস, কনজ্যুমার ও লেবার বিষয়ক মন্ত্রী পল স্কালী।
লেবার পার্টির চেয়ার মিস্ এঞ্জেলা রেইনার, এমপি, বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ার এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ট্রেড এনভয় রুশনারা আলী এমপি, জার্মানির বিখ্যাত কার্লশ্রুহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জামাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সহকর্মী ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শহীদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিবেশী নেওয়াজ আহমেদ, প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিবিসি’র বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মোস্তাফা ২০০৪ সালে বিবিসি’র জরিপে বঙ্গবন্ধুকে “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি” হিসেবে ঘোষণা সম্পর্কে তার অপূর্ব অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবীণ ও নবীন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উচ্চ আয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতো। তবে তার নিমর্ম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি থামানো যায়নি। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এক উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বঙ্গবন্ধুকে অতুলনীয় মহান নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার গৌরব দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার চিন্তা ও আদর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন।
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীর এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ দিবসটি আমরা পালন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দারপ্রান্তে। এ দু'টি ঘটনা বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল মাইলফলক।
ব্রিটিশ মিনিস্টার পল স্কালী বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং জাতীয় শোক দিবস পালনে বাংলাদেশের মানুষ ও সমগ্র বাঙালি জাতির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথের সাথে বঙ্গবন্ধু’র অর্ন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু দলমত নিরপেক্ষভাবে যুক্তরাজ্যে লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের নেতৃবৃন্দের সাথেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
লেবার পাটির চেয়ার এঞ্জেলা রেইনা অনুষ্ঠানে লেবার লিডার স্যার কির স্টারমার-এর প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বঙ্গবন্ধুকে এশিয়ার মহান নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি স্যার হ্যারলড উইলসনের সাথে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে স্যার উইলসন সেসময়ে তার ব্যক্তিগত অপূরনীয় ক্ষতি হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।
রোশনারা আলী বলেন, ১৫ আগস্ট কেবল শোকের নয়, এদিন আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিনি জন্য যে আপোষহীন সংগ্রাম ও পরম ত্যাগ করে গেছেন সেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন প্রজন্মকেও সচেতন করতে পারি।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও সুপরিকল্পিত উপায়ে তরুণ সমাজের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যাতে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধ ও সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ড. শহীদ হোসেন ভিয়েনা থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রবাসে তার দুই কন্যার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তার স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকা থেকে যোগদানকারী নেওয়াজ আহমেদ ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার মর্মান্তিক স্মৃতির বর্ণনা দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার ভূমিমন্ত্রী ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে পবিত্র কোরান, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন