ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদায় "শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" পালন করেছে। দিবসের বিশেষ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং চ্যান্সেরী প্রাঙ্গণে স্থাপিত শহীদ মিনারে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সকাল ১০টায় দূতাবাসের আয়োজনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাসের আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বন্ধুপ্রতীম বিদেশী নাগরিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ সংযুক্ত হন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করা হয়। ইউনেস্কোর আঞ্চলিক পরিচালকের পক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী Ms. Megumi Watanabe মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশী তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার স্বকীয় গুরুত্ব ও অবস্থান সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। ইতালির ফ্লোরেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল Ms. Giorgia Granata বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্য বিনির্মাণের ক্ষেত্রে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেও মতামত ব্যক্ত করেন। নেপলস্ এ নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল Ms. Fiorella Breglia ভাষার জন্য বাংলাদেশের তরুণদের আত্মত্যাগের জন্য তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান এবং গর্ববোধ করেন বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বন্ধুপ্রতীম ইতালীয় ও অন্যান্য বিদেশী নাগরিকবৃন্দও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মত্যাগকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা মাতৃভাষার অনন্যতা ও স্বকীয়তার বিষয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। Rishilpi International নামীয় সংগঠনের উদ্যোক্তা বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুই ইতালীয় নাগরিক বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে, হাইব্রিড মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্মবোধক গান ও নাচের ধারণকৃত অংশ উপভোগ করেন। মিজ্ সুস্মিতা সুলতানার পরিচালনায় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঞ্চারী সংগীতায়ন’ এর শিক্ষার্থীদের সপ্রতিভ পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের এ অংশের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মিজ লাওরা নামের একজন ইতালিয়ান ছাত্রীর মনোমুগ্ধকর একক পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্যায়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ইতালি, ভারত, থাইল্যাণ্ড ও প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের ধারণকৃত বর্ণিল পরিবেশনা অনুষ্ঠানে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ, ইতালীয় আলোকচিত্রী Mr. Stefano Romano -এর তোলা ছবি নিয়ে তৈরি "আমার চোখে একুশ" শীর্ষক Photo Journey সকলের ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল