১৩ এপ্রিল, ২০২৪ ২১:৫৬

মিশিগানে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র :

মিশিগানে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

নিহত যুবক হোসেন আল রাজী। ছবি : সংগৃহীত

ষোলো দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে হোসেন আলী রাজি (১৯) নামের আরেক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ১২ এপ্রিল স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ২টায় যুক্তরাষ্ট্রে নিজ বাড়িতে পুলিশের গুলিতে মারা যান এই তরুণ।

মিশিগান স্টেটের ওয়ারেন সিটিতে হোসেন আলীকে গুলি করে হত্যায় পুলিশের দাবিটি গত ২৭ মার্চ নিউইয়র্কে একই বয়সী বাংলাদেশি উইন রোজারিওকে হত্যার সাথে হুবহু মিলে গেল। ওয়ারেন সিটি পুলিশের কমিশনার চার্লস রুস্টম জানান, শুক্রবার ভর দুপুরে ৯১১-এ পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন আসে। সাথে সাথেই এ্যাম্বুলেন্সসহ ৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছান। পুলিশ অফিসাররা ঐ যুবকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখতে পান এবং হাতে থাকা অস্ত্র ফেলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তুু ওই যুবক তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে পুলিশ অফিসারদের দিকে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে যান। এ অবস্থায় পুলিশ অফিসাররা আত্মরক্ষার্থে ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়েন এবং রক্তাক্ত তরুণ রাজিকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, এই বিষয় নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে, নতুন কোন তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো হবে। 

এ ঘটনার নিহতের বাবা, মা, ভাইবোন সবাই এখন বাকরুদ্ধ। নিহতের বাবা মোহাম্মদ আতিক হোসেন হতভম্ব হয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমার ২ ছেলে ও আমি সকালে একসাথে ফজরের নামাজ পড়ি। তারপর সবাই ঘুমিয়ে পরি। দুপুরের দিকে ওর মা ও আমার মেজো ছেলে আমাকে বলছে হোসেন আল রাজি অসংলগ্ন আচরণ করছে। আমিও দেখি অশ্বিাস্য আচরণ করছে। এ অবস্থায় আমার মেজো ছেলেকে দিয়ে ৯১১ এ কল দেই। কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আমাদেরকে নিরাপদ স্থানে আছি কিনা জানতে চায়। আমরা গ্যারেজের গাড়ির ভিতর আছি বলার কিছু সময়ের মধ্যে ২-৩ টি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর পরে পুলিশ অফিসাররা আমাদেরকে ডেকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন নিয়ে এক এক করে সবার জবানবন্দি নেন। আমরা সবাই বাসায় ফিরে আসলে বিকাল ৪টার দিকে খবর আসে আমার ছেলে মারা গেছে।

আতিক হোসেন উল্লেখ করেন, আমি এ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য চাইলাম ছেলেকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য, আর পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল। বিষয়টা আমার বোধগম্য নয়। কি এমন অপরাধ করলো আমার ছেলে, যে কারণে ওকে গুলি করে মারতে হলো। আতিক হোসেন মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশি-আমেরিকান সবার সাহায্য ও সহযোগিতা চেয়েছেন। আশা করছেন ন্যায় বিচার পাবেন।

নিহতের পিতা আতিক হোসেন জানান, আমার ছেলের মরদেহ এখনো হাসপাতালে পড়ে আছে, দেখতেও পারছি না। তবে আগামী সোমবার ওর লাশ হস্তান্তর করার সম্ভাবনা আছে এবং ঐদিনই ইসলামিক সেন্টার অব ওয়ারেনে দুপুরে জানানা নামাজ শেষে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। জানা যায়, নিহত হোসেন আল রাজি হলেন মোহাম্মদ আতিক হোসেনের বড় ছেলে। দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানিবাজার পৌরসভার সুপাতলায়। প্রায় ১৬ বছর আগে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তারা। ৫ ভাইবোনের মধ্যে রাজি ছিলেন দ্বিতীয়। 

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ভর দুপুরে নিউইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কে উইন রোজারিও তার মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে অসংলগ্ন আচরণ করায়- ছোট ভাই ৯১১ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চায়। পুলিশ বাসায় এসে উইনকে আত্মসমর্পণের আহবান জানায়। উইন তাতে সম্মত হওয়া দূরের কথা উল্টো রান্নাঘরে ব্যবহৃত কেঁচে উচিয়ে পুলিশের প্রতি তেড়ে যাবার চেষ্টা করলে ৫/৬ রাউন্ড গুলিতে উইনকে পুলিশ ধরাশায়ী করে। গুরুতর অবস্থায় নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উইন রোজারিও’র হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চেয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কে। তবে গত ১৬ দিনেও কোন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সংবাদ জানা যায়নি। হোসেন আল রাজির হত্যাকাণ্ডে কী বিচার হবে তা এখন দেখার বিষয় বলে কম্যুনিটির বিদগ্ধজনেরা মন্তব্য করেছেন।

সেখানকার হ্যামট্রমিক সিটির ডেপুটি মেয়র কামরুল হাসান ক্ষোভের সাথে বলেন, একটি গুলিতেই রাজি লুটিয়ে পড়ার পর আরো কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিতের মধ্যে কী পুলিশের প্রতিহিংসা পরায়ণতার প্রকাশ ঘটেনি? কামরুল হাসান অবিলম্বে পুলিশের বডি ক্যামেরা প্রকাশ এবং এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার দেখতে চেয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/ওয়াসিফ/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর