ব্রিটেনের স্কটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফয়সল হুসেন চৌধুরী (৫৫) লন্ডনের নিজ নির্বাচনী এলাকার হাল-হকিকত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, প্রবাসে আমরা দেশীয় রাজনীতির ডামাডোলে এতটাই বিভক্ত ও আসক্ত যে, কেউই বাংলাদেশি বাঙালির পরিচয়ে পরিচিত হতে পারি না। কেউ আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি হয়ে গেছে। এরফলে বাংলাদেশি খুঁজে পাই না। অর্থাৎ জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না বলে বহুজাতিক সমাজে নিজের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে সক্ষম হচ্ছি না। অথচ বাংলাদেশের যে কোন কল্যাণে মূলধারার রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত হবার বিকল্প নেই।
সিলেট অঞ্চলের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সন্তান ফয়সল বলেন, আমার এলাকা হচ্ছে এডিনবার্গ এবং লুথিয়ান অঞ্চল। সেখানে মোট ভোটারের ১৮০০ হলেন বৃটিশ বাংলাদেশি। জয় পেতে প্রয়োজন মাত্র ৯০০ ভোট। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাসের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হবার আগে কোন বাংলাদেশিই জয়ী হতে পারেননি। কারণ, সিলেটি দাঁড়ালে ঢাকাইয়ারা ভোট দেন না, বরিশাইল্যা এলে চাঁটগাইয়ারা অথবা নোয়াখালিরা ভোট দেন না।
লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত স্কটিশ পার্লামেন্টের মেম্বার ফয়সল চৌধুরী আরও বলেন, কোন আসনে লেবার পার্টি থেকে কেউ প্রার্থী হলে, সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে আরেক বাঙালি দাঁড়িয়ে যান কঞ্জারভেটিভ পার্টি থেকে। এ অবস্থায় অন্য পার্টির ব্রিটিশ প্রার্থীরা জয়ী হয়ে যান।
অস্টম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় অভিবাসনের মর্যাদায় ব্রিটেনে বসতি গড়া ফয়সল চৌধুরী নিউইয়র্ক প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই ইউএস কংগ্রেসে আসন গাড়তে সক্ষম হবেন। শুধু তাই নয়, যে হারে কম্যুনিটি সমৃদ্ধ হচ্ছে, তার মাধ্যমে নিজেরাই শুধু নন, নতুন প্রজন্মকেও মার্কিন রাজনীতির শীর্ষে অধিষ্ঠিত হবার পথ সুগম করতে পারবেন। আমি আশা করছি পরবর্তীতে যখোন আসবো নিশ্চয়ই সিনেটর অথবা কংগ্রেসম্যান হিসেবে কাউকে দেখবো এই আমেরিকায়।
নিউইয়র্কে আগমণ উপলক্ষে ফয়সল চৌধুরীকে গ্লোবাল এনআরবি চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে ২৮ আগস্ট বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত ফয়সল চৌধুরী বলেন, আমার এই সংক্ষিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে এনআরবি ওয়ার্ল্ড যেভাবে সম্মানিত করলো, আমি তাতে গর্বিত।
সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল এনআরবি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হোস্ট সংগঠনের নির্বাহী সদস্য মশিউর রহমান মজুমদার। অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন দাদা হোম কেয়ারের কর্ণধার খোকন ইসলাম, খলিল বিরিয়ানীর স্বত্বাধিকারি খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম প্রমুখ।
এই অনুষ্ঠানের পরই পাশের মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র আসন্ন নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী প্যানেল’র পরিচিতি সমাবেশেও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ফয়সাল চৌধুরী এমপি। সেখানে ছিলেন সমগ্র কম্যুনিটির প্রতিনিধিত্বকারি শতাধিক সংগঠনের নেতারা। তাদের উদ্দেশ্যে ফয়সল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির বিভাজন পরিহার করে যদি বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন তাহলে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হবে খুব দ্রুত।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন