শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদেশি সুর প্রভাবিত নজরুলসংগীত

রশিদুন্ নবী

বিদেশি সুর প্রভাবিত নজরুলসংগীত

বাংলা গানের ভান্ডার সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো বিদেশি সুর সংগ্রহ এবং তার যথার্থ প্রয়োগ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) তাঁদের গানে বিদেশি সুরের প্রয়োগ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সংগীত রচনায় পাশ্চাত্য সংগীতের প্রভাব ও ঋণ বহুবার বিভিন্ন প্রসঙ্গে স্মরণ করেছেন। কিশোর রবীন্দ্রনাথ তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদেশি সুর-যন্ত্র অর্গান বাজানোর সময় সে সুরের বাণীরূপ দান করেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর গানে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রত্যক্ষ প্রভাবের স্বাক্ষর রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথের বাল্মীকি প্রতিভা ও মায়ার খেলা গীতিনাট্যদ্বয়ের একাধিক গানে আইরিশ ও ইতালিয় সুরের আমেজ লেগেছে। আবার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কোরাস গানগুলোতে পাওয়া যায় ইউরোপীয় চার্চ মিউজিকের উঁচু-নিচু স্বরক্ষেপের প্রয়োগ। এই দুই সংগীত রচয়িতার পর বিদেশি সুরের প্রয়োগ দেখা যায় কাজী নজরুল ইসলামের গানে। বিদেশি সুর সঞ্চয়নে নজরুল তাঁদের উত্তরসাধক। তবে পার্থক্য এই যে, রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলাল দুজনেই গ্রহণ করেছেন পাশ্চাত্য সুর আর নজরুল গ্রহণ করেছেন প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের সুর। তাই নজরুলের অনেক গানেই পাওয়া যায় আরবীয়, ইরানীয়, তুর্কি, মিসরীয় প্রভৃতি সুর। পূর্বসূরিদের আমদানিকৃত পাশ্চাত্য সুরের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় থাকলেও নজরুল এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন। বিদেশি সুরকে দেশীয় সংগীতের সঙ্গে মিশিয়ে তিনি যে-সব গান রচনা করেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। এ প্রসঙ্গে ডক্টর বাঁধন সেনগুপ্ত নজরুল কাব্যগীতি : বৈচিত্র্য ও মূল্যায়ন গ্রন্থে উল্লেখ করেন:

‘বিদেশি সুর-সম্পদকে তিনি দেশীয় সংগীতরসে নিষিক্ত করে যে প্রাণ-মাতানো গীতিগুচ্ছ রচনা করেন তার তুলনা আমাদের সংগীতে মেলা ভার। যেমন, ‘রুম্্ঝুম্্ ঝুম্্ঝুম্্ রুম্্ঝুম্্ ঝুম্্’ রচনাটি আরবি সংগীতের সুরকে অবলম্বন করে রচিত। বেদুইন ‘আরবি’ মেয়েদের মনোরঞ্জনী গানের সুরের প্রভাব এই রচনাটির বৈশিষ্ট্য। একই নিয়মে ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে’ গানটিতে ‘নৌরচকা’ জাতীয় গানের সুরকে অনুসরণ করা হয়েছে।’

নজরুল বাংলা গজল রচনা করেন পারসিক গজলের ভাবাদর্শে। তবে বিদেশি সুরের প্রয়োগে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে পারস্যই তাঁর প্রেরণার একমাত্র উৎস ছিল না। অন্যান্য অনেক দেশ থেকেও তিনি প্রচুর পরিমাণে সুরের আদল গ্রহণ করেছেন। আরবি সুরে তাঁর একাধিক গান রয়েছে। তেমনি আছে জিপসিদের সুরের গান। জিপসিরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। হাঙ্গেরি তাদের আদি বাসস্থান বলে ধারণা করা হয়। জিপসিরা যখন যে দেশে গেছে, সে দেশের সুর আপন কণ্ঠে ধারণ করেছে। এর ফলে তাদের গানের ঢঙে এসেছে একটা আন্তর্জাতিক সুরভঙ্গি। নজরুল তাঁর একাধিক বাংলা গানে এই মিশ্র আন্তর্জাতিক সুরভঙ্গিটি গ্রহণ করেছেন। আবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দক্ষিণ সমুদ্র দ্বীপগুলোর সুরেও তাঁর গান রয়েছে। তিনি একটি সচেতন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নানা দেশের সুরভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলা গানের ভান্ডারকে পরিপুষ্ট করে তুলেছেন।

নজরুলের বিদেশি সুরের গানগুলোতে জনপ্রিয় বিলাপের সুরের প্রাধান্য লক্ষ করে গবেষক নারায়ণ চৌধুরী তাঁর কাজী নজরুলের গান শীর্ষক গ্রন্থে বলেন : ‘নজরুলের বিদেশি সুরভঙ্গিযুক্ত গানগুলির বৈশিষ্ট্য এই যে, সেগুলিতে জনপ্রিয় বিলাপের সুরের প্রাধান্য। একটা ধিরষরহম বা কান্নার ভাব গানগুলোর সুরের সঙ্গে জড়িয়ে-মিশিয়ে আছে, যেমন তা আছে আমাদের পূর্ববঙ্গের ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া প্রভৃতি গান কিংবা আসামের বিহু গানের মধ্যে। এই কান্নার ভঙ্গিটি নজরুলের বিদেশি ধাঁচের গানগুলোকে একটা অনন্যতা দিয়েছে, যা আর কারও গানে সুলভ নয়। নজরুলের গান সুরে ভরা-সুরের মাদকতায় তাঁর গানের কোনো তুলনা হয় না।’

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গানে কেবল বিদেশি সুরের প্রয়োগ করেননি, যখন যে দেশের সুর গ্রহণ করেছেন, তখন সে দেশের পরিবেশের অনুষঙ্গ রচনার জন্য তিনি যে বাণীর আশ্রয় নিয়েছেন তাও যথার্থ। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত নজরুল স্মৃতি শীর্ষক গ্রন্থে কবি-পুত্র কাজী অনিরুদ্ধের উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে : ‘... বাংলা গানের ক্ষেত্রে তিনি যেন মধ্যপ্রাচ্যের সুরা ও সাকি, খেজুর গাছ, প্রখর রৌদ্র এবং ওয়েসিসের শ্যামলিমা নিয়ে হাজির হলেন। বাঙালির কাছে এর স্বাদ নতুন, সুর নতুনতর।’

শুধু বাংলা গান নয়, উত্তর ভারতীয় সংগীত নয়, বিদেশি সংগীত সম্বন্ধেও নজরুল প্রচুর জ্ঞানার্জন করেন। পারস্য সংগীত সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান কতটা গভীর ছিল সে সম্বন্ধে ড. বাঁধন সেনগুপ্ত নজরুল কাব্যগীতি : বৈচিত্র্য ও মূল্যায়ন গ্রন্থে বলেন : “পারস্য দেশের ‘মোকাম’ ও ‘গুম্বা’ আমাদের দেশে প্রথম দক্ষতার সঙ্গে নজরুল তাঁর কাব্যে প্রয়োগ করেছিলেন।...‘মোকাম’ বলতে আমাদের দেশের সংগীতের ‘ঠাট’ এর প্রতিরূপকেই বোঝায়। তাঁর গানে এই সব ঠাটের ব্যবহার ও তার সাহায্যে নবরাগের রূপায়ণ নজরুলের গানে সবিশেষ সার্থকতা লাভ করেছিল।”

কাজী নজরুল ইসলাম বিদেশি সুরের প্রভাবে যে-সব গান রচনা করেন নিম্নে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো :

ক. আরবি সুরে : ১. চম্্কে চম্কে ধীর ভীরু পায় (লোকসংগীতের সুর), শিল্পী : হরিমতী, রেকর্ড নম্বর : এন. ৭১৭৩, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ১৯৩৩ ২. রুম্্ঝুম্্ ঝুম্্ঝুম্্ রুম্্ঝুম্্ ঝুম্্ খেজুর পাতায়, রেকর্ড নম্বর : এন.৭১৭৩, প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ১৯৪২, ৩. রেশমি রুমালে কবরী বাঁধি, শিল্পী : অণিমা বাদল, রেকর্ড নম্বর : এন. ৯৭৮৭, প্রকাশকাল : অক্টোবর ১৯৩৬, ৪. শুকনো পাতার নূপুর পায়ে (লোকসংগীতের সুর)- তুর্কি, শিল্পী : হরিমতী, রেকর্ড নম্বর : এন. ৭১৭৩, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ১৯৩৩, ৫. ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ (লোকসংগীতের সুর)- তুর্কি, শিল্পী : আব্বাসউদ্দীন আহমদ, রেকর্ড নম্বর : এফটি. ৩৯৮০, প্রকাশকাল জুন ১৯৩৫।

শেষোক্ত ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ ও ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ’ শীর্ষক গান দুটি আরবের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় সংগীত ‘ইয়া বানাত উস্কান্দারীয়া’ গানের অনুসরণে কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেন। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক আসাদুল হক ‘নজরুল ইনস্টিটিউট পত্রিকা’র ২৬তম সংখ্যায় লিখেছেন : ‘আমি নজরুলের গীতিগ্রন্থে দেখতে পাই, ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ গানটির শীর্ষে নজরুলের হস্তাক্ষরে পাওয়া যায় ‘আরবি সুর’। অথচ আমি তুরস্কে থাকাকালে তারা আমায় বলেছিল এ সুর তাদের দেশের এবং এটি ৫০০ বছর পুরনো। আমি তাই লেবানন (বৈরুতে) কিংবা সিরিয়া (দামাস্কাস) অবস্থানকালে কোনো আরবি গান আছে কি-না তা খুঁজে বেড়াতাম। একদিন, মনে হয় আমার জন্য শুভ দিন, সন্ধ্যায় চলার পথে রাস্তার পাশে এক রেকর্ডের দোকানে প্রবেশ করে আমার ভাঙা আরবি ভাষায় দোকানদারকে বুঝাতে চাইলাম আমার কথা। দোকানদার আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এক বৃদ্ধ লোকের। তিনি দোকানের এককোণে চেয়ারে বসেছিলেন। আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার কথা মন দিয়ে শুনে আমাকে সুরটি শোনাতে বললেন। আমি বাংলা ও তুর্কি গান দুটোই তাকে শোনালাম। তিনি বললেন, ‘না এটি আরবি সুর, এ সুর সিরিয়াতে পাওয়া গেছে ১০০০ বছর আগে। ... আমায় তিনি গানের যে চারটি লাইন গেয়ে শুনিয়েছিলেন আমি আমার নোট বইয়ে লিখে নিয়েছিলাম। ... লাইন চারটি নিম্নে উল্লেখ করলাম : গান (আরবি) :

ইয়া বানাত উস্কান্দারিয়া (ইস্তাম্বুল)/ ইশকাকুম হারাম/ দাবা ক্যালবি দাবা জিসমি/ কুুল্লো মিনাল হারাম (আমানআল্লাহ)॥’

খ. মিসরীয় নৃত্যের সুরে : মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে নেচে যায়, শিল্পী : অণিমা বাদল, রেকর্ড নম্বর : এন. ৭২৯১, প্রকাশকাল : অক্টোবর ১৯৩৪

গ. ইরানি সুরে: ১.              পরি জাফরানি ঘাগরি, শিল্পী : অণিমা বাদল, রেকর্ড নম্বর : এন. ৯৭৮৭, প্রকাশকাল : অক্টোবর ১৯৩৬, ২. মম তনুর ময়ূর সিংহাসনে এসো, ৩. আনারকলি! আনারকলি!

ঘ. কিউবান (হাওয়াইয়ান) নৃত্যের সুরে: ১. দূর দ্বীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি, শিল্পী : অণিমা বাদল, রেকর্ড নম্বর : এন. ৭২৯১, প্রকাশকাল : অক্টোবর ১৯৩৪, ২. এই আমাদের বাংলাদেশ, শিল্পী : ধীরেন দাস ও সহশিল্পীবৃন্দ। ‘প্রতাপাদিত্য’ নাটকের গান।

ঙ. পাশ্চাত্য সুরে: ১. যাই গো চলে যাই, শিল্পী : তৃপ্তি সিংহ, রেকর্ড নম্বর : এইচ. ১১২৪, প্রকাশকাল : অক্টোবর ১৯৪২, ২. চল্ রে চপল তরুণ দল, শিল্পী : কমল দাশগুপ্ত, রেকর্ড নম্বর : এফটি. ২৯৬৭, প্রকাশকাল : জানুয়ারি ১৯৩৪, ৩. লম্্পম্্ লম্্পম্্ লম্্পম্্, শিল্পী : রঞ্জিত রায়, রেকর্ড নম্বর : এন. ১৭৯৪, প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ১৯৩৮।

নজরুলের গানে শুধু বিদেশি সুরের প্রভাবই নয়, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের সুরের প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন প্রাদেশিক সুরে তিনি যে-সব গান রচনা করেছেন, তার কয়েকটি উদাহরণ: ১. কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা (রাগ : কর্ণাটি সামন্ত), শিল্পী : সুপ্রভা ঘোষ, রেকর্ড নম্বর : এইচ. ৮৭৬, প্রকাশকাল : জানুয়ারি ১৯৪১, ২. এস চির-জনমের সাথী (রাগ : নাগ সরাবলী), শিল্পী : শৈল দেবী, রেকর্ড নম্বর : এন. কিউ. ১৮১, প্রকাশকাল : মে ১৯৪১, ৩. পরদেশী মেঘ যাও রে ফিরে (রাগ : সিংহেন্দ্র-মধ্যমা) ইত্যাদি, শিল্পী : রঞ্জিত রায়, রেকর্ড নম্বর : এন. ১৭৯৪, প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ১৯৩৮। নজরুল এ ছাড়াও উত্তরপ্রদেশের কাজরি সুরের ভাবধারায় অনেকগুলো গান রচনা করেন। যেমন: ১.             শাওন আসিল ফিরে, শিল্পী : ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র, রেকর্ড নম্বর : এন. ২৭৩৭৮, প্রকাশকাল : জুন ১৯৩৪, ২. সখি বাঁধলো বাঁধলো ঝুলনিয়া, শিল্পী : পারুলবালা, রেকর্ড নম্বর : জেএনজি. ৮৭, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ১৯৩৩, ৩. কাজরি গাহিয়া এস গোপ-ললনা ইত্যাদি।

এ ছাড়াও নজরুল তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু কমরেড মুজফফর আহমদের অনুরোধে ‘ইন্টারন্যাশনাল সং’-এর বাংলা অনুবাদ করেন এবং এর নামকরণ করেন ‘অন্তর-ন্যাশনাল সংগীত’। তবে ইন্টারন্যাশনাল সং-এর অনুবাদ করলেও মূল সুর না পাওয়ার কারণে তিনি তাঁর অনূদিত গানে সুর সংযোজনা করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে মুজফ্ফর আহমদ তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা যে উক্তি করেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: ‘নজরুল ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল সংগীতের নাম দিয়েছে অন্তর-ন্যাশনাল সংগীত। হয়তো সকলে জানেন না যে, ইন্টারন্যাশনাল সংগীতের একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। এই গানটির ভিতর দিয়েই মজুর শ্রেণির আন্তর্জাতিকতা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। সারা দুনিয়ার মজুর শ্রেণির মধ্যে যে একটা সংঘবদ্ধতা আছে তাও প্রকাশ পায় এই গানটির ভিতর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় এই গানটি গাওয়া হয় একই সুরে।... আমাদের কেউ তখন ইন্টারন্যাশনাল সংগীতের সুর জানতেন না, নজরুলও জানত না। নজরুল আমায় বলল, ‘এর স্বরলিপি (নোটেশন) জোগাড় করে দাও। তা হলে তা যন্ত্রে বাজিয়ে সেই সুরের চৌহুদ্দির ভিতরে গানটি আমি তরজমা করে দেব।’ কিন্তু আমাদের কেউ দিতে পারলেন না এই নোটেশন। শেষে নজরুল একদিন আমাদের অফিসে (৩৭, হ্যারিসন রোডে) আসতেই আমি তাকে বললাম, ‘নোটেশন ছাড়াই তুমি গানটির অনুবাদ করে দাও। প্রথমে একবার তা ‘গণবাণী’তে ছাপতে দিই, তারপরে দেখা যাবে কি করা যায়।’ তখনই সেখানে বসেই সে গানটির অনুবাদ করে দিল। বাংলা ভাষার সর্বোৎকৃষ্ট অনুবাদ তো বটেই, আমার বিশ্বাস ভারতীয় ভাষাগুলোতে যতসব অনুবাদ হয়েছে সে-সবেরও সেরা। ... তরজমা করার পরে নজরুল আবারও আমাদের বলে দিল যে তারপরেও যদি আমরা নোটেশন জোগাড় করে দিই তবে সে গানে সুর-সংযোগ করে দেবে। কিন্তু নোটেশন আমরা আর জোগাড় করতে পারলাম না। ... নজরুল কিন্তু তার তরজমার সুর-সংযোগ করার সুযোগ আর পায়নি।’

উপসংহারে গিয়ে এ-কথা বলা যায় যে, বিদেশি সুরের যথার্থ প্রয়োগের ফলে কাজী নজরুল ইসলামের গানে কেবল নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়নি- বাংলা গানের ভুবনও হয়েছে সমৃদ্ধ।

সর্বশেষ খবর