খুকি আপা সেই যে গেলেন আর এলেন না
রাজিয়া সুলতানা অনু
আমার অ্যাথলেট হওয়ার পেছনে বড় অবদান সুলতানা আহমেদেরই (বিয়ের আগের নাম)। আমরা তাকে খুকি আপা বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক সিনিয়র ছিলেন খুকি আপা। আমাকে তুই বলতেন।
পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকেই শুধু অ্যাথলেট নয়, নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে খুকি আপার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। মোহামেডান ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতেন তিনি। ১০০ মিটার হার্ডলস, লংজাম্প ও হাইজাম্পে খুকি আপা বরাবরই ছিলেন দেশসেরা।
১৯৬৮ সালে অল পাকিস্তান অ্যাথলেট চ্যাম্পিয়নশিপে লংজাম্পে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৭৩ সালে দিল্লিতে অলইন্ডিয়া গ্রামীণ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সোনার পদক জেতেন খুকি আপাই। এত বড় অ্যাথলেট ছিলেন। অথচ তার ভিতর কোনো অহঙ্কার ছিল না। খুব ছোটবেলা থেকেই কখনো ঢাকা স্টেডিয়ামে ও বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে খুকি আপার দৌড় দেখতে যেতাম। আর ভাবতাম যদি উনার মতো অ্যাথলেট হতে পারতাম।
১৯৭৩ সালের কথা। সেবার স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়। অভিষেকেই আমি ৪০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হই। খুকি আপা ভীষণ খুশি হলেন। বললেন, তুই তো হরিণের মতো দৌড়াস। তুই বড় অ্যাথলেট হতে পারবি। তার এ কথায় দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হই।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ভাইয়ের সঙ্গে খুকি আপার বিয়ে হয়। আমন্ত্রিত হলেও আমি বিয়েতে যেতে পারিনি। আপার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দুপুরে।
ওই সময় রাশিয়ান কোচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আমাদের ট্রেনিং করাচ্ছিলেন। খুকি আপা এলেন, কোচকে বলে গেলেন আগামীকাল থেকেই তিনি নিয়মিত ট্রেনিং করবেন। আর এলেন না। ১৫ আগস্ট ঘাতকরা তাকেও ৩২ নম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করে।