কোথায় নেই সাকিব আল হাসান। মাঠ, মাঠের বাইরে এবং দুই দলের প্রেস কনফারেন্স-কোথাও নেই। অথচ সব জায়গায়, সব আলোচনায় ৩৭ বছর বয়স্ক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আজ শুরু মিরপুর টেস্ট। ৭১ টেস্ট খেলা সাকিবের আজ মাঠে নামার কথা ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদের কারণে তাকে শেষ মুহূর্তে স্কোয়াড থেকে বাদ দেয় বিসিবি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে সাকিব সমর্থকরা গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামমুখী লংমার্চ করে। তাদের ওপর হামলা করে একদল লোক। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল মাঠের বাইরের চিত্র। যখন আন্দোলন চলছিল, তখন মাঠে অনুশীলন করছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। দুই দলের প্রেস কনফারেন্সের মধ্যমণিও ছিলেন টাইগার সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এইডেন মারক্রামও কথা বলেন সাকিবকে নিয়ে। আজ সকাল ৯টায় শুরু টেস্টের আবহটাই ছিল সাকিবকেন্দ্রিক। টাইগার অধিনায়ক নাজমুল স্বীকার করেছেন এমন পরিস্থিতিতে মানসিক অবস্থা কঠিন, ‘এমন পরিস্থিতিতে সত্যি করে বললে দলের মানসিক অবস্থা কঠিন। তবে সাকিবের বিষয়টিতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটা নিয়ে চিন্তা করাটা সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলাতে ফোকাস করতে চাই। কারণ আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ এই দুইটি টেস্ট।’
ভারতের বিরুদ্ধে কানপুরে টেস্ট খেলার আগে সাকিব জানিয়েছিলেন, মিরপুরে বিদায়ী টেস্ট খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যদিও তার খেলার বিষয়ে শঙ্কা ছিল। তবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন সাকিব। কিন্তু বিসিবি অপারগতা জানায়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাকে দেশে ফেরার বিষয়ে সবুজসংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তাহীনতার জন্য না আসার পরামর্শ দেন। যদিও মিরপুর টেস্ট খেলার জন্য সাকিব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই এসেছিলেন। ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু ‘মিরপুর ছাত্র-জনতা’র প্রতিবাদে ঢাকায় আসতে পারেননি। কানপুরেই শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন সাকিব।
সাকিব শেষ টেস্ট খেলবেন। প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন নাজমুলরা। সাকিব চেয়েছিলেন মাঠ থেকে বিদায় নিতে। বাংলাদেশের কোনো টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তবে ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন এখন পর্যন্ত খালেদ মাহমুদ সুজন। ২০০৫ সালে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিদায় নিয়েছিলেন। এবার সেই সুযোগ ছিল সাকিবের। অবশ্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টি-২০ ম্যাচ খেলে বিদায় নিয়েছেন। সাকিবকে বিদায় জানাতে তৈরিই হয়ে ছিলেন নাজমুল বাহিনী। তাদের ইচ্ছা ছিল স্মরণীকালের স্মরণীয় রিসেপশন দেওয়ার। সাকিবকে রিশেপশন দেওয়ার কথা গতকাল বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘অবশ্যই পরিকল্পনা ছিল আমাদের। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাকিব। শুধু বাংলাদেশ বলব না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে কোনো কারণে হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেকটি খেলোয়াড় মনে করে এটা পেন্ডিং থেকেই গেল।’ সাকিব থ্রি ‘ডাইমেনশন’ ক্রিকেটার। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। যে পরিসংখ্যান, ব্যাটার হিসেবে অনায়াশে জায়গা করে নিতে পারেন বাংলাদেশ। বোলার হিসাবেও পারেন। ফিল্ডিংয়ে তো কথা নেই। আবার অধিনায়ক হিসেবেও তার মস্তিস্কও ক্ষুরধার। সাকিব খেললে টিম ম্যানেজমেন্টের সহজ হতো একাদশ সাজাতে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘এখনো সমস্যা হচ্ছে কম্বিনেশন মেলাতে। অস্বীকার করার কিছু নেই এখন একাদশ সাজাতে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে একাধিক ক্রিকেটার খেলাতে হবে।’ তবে সাকিবের অনুপস্থিতি এখন পূরণ করতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ এখন রয়েছেন দারুণ ছন্দে। দিন দিন ম্যাচিউড হচ্ছেন মিরাজ। গতকাল মিরাজের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেন, ‘মিরাজ দারুণ ছন্দে রয়েছে। অন্য যে সব খেলোয়াড় আছে, সবার এই সামর্থ্য আছে যার যে জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করবে।’
সাকিবময় প্রেস কনফারেন্স হলেও টেস্টে বৃষ্টি হানা দিতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের যে রিপোর্ট, তাতে দেখা যাচ্ছে আজ হালকা বৃষ্টি হবে। টেস্টের দ্বিতীয় দিন ভারী বৃষ্টি হবে। শেষ তিন দিন ভেসে যেতে পারে। যদি এমন হয়, তাহলে ফিরে যেতে হবে নয় বছর আগে ২০০৯ সালে। সেবার বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দুটি টেস্টই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।