নতুন এক উৎসবের অপেক্ষায় ঢাকা মোহামেডান। ১৯৫৭ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের মাধ্যমে প্রথম শিরোপা জিতেছিল ক্লাবটি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক প্রায় সব আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। শিরোপা জেতা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই মোহামেডানই বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর পেশাদার লিগে কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ২০০৭-২০০৮ মৌসুমে শুরু হওয়া এ আসরে চারবার রানার্সআপই তাদের বড় প্রাপ্তি। ঢাকা আবাহনী হ্যাটট্রিকসহ ছয় এমনকি অভিষেকের পর বসুন্ধরা কিংস টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে। শেখ জামাল ধানমন্ডি ৩ ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
যাক মোহামেডানও পেশাদার লিগ খতিয়ানে চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লেখাতে চলেছে। ১৪ ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ৩৫ আর ঢাকা আবাহনীর ২৮। স্বপ্ন পূরণ করতে তাদের এখন দরকার ছয় পয়েন্ট বা দুই ম্যাচে জয়। এখনো তাদের চার ম্যাচ বাকি। এর মধ্যে দুটি জিতলেই নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। যে লিগের ১৪টি আসর হয়ে গেছে সেখানে কি না মোহামেডানের মতো দেশপ্রিয় দলকেও নতুন চ্যাম্পিয়ন বা স্বপ্ন বলতে হচ্ছে। এ যেমন বিস্ময় তেমনি লজ্জারও। আবার আনন্দ বললেও ভুল হবে না। কেননা প্রায় দুই যুগ পর লিগ জিততে চলেছে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ২০০৩ সালে মোহামেডান শেষবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২৩ বছরের গ্যাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সত্যিই ব্যর্থটা।
২০০৩ সালে ঢাকা প্রিমিয়ারে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মাসুদ রানার নেতৃত্বে। এবার পেশাদার লিগে প্রথমবার শিরোপার অপেক্ষায় রয়েছে মালির ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতের নেতৃত্বে। যদি হয় তাহলে কোনো বিদেশির অধিনায়কত্বে মোহামেডান প্রথম চ্যাম্পিয়ন হবে। তাহলে বাঁধভাঙা উৎসবটা কোথায় হবে? কুমিল্লা না গাজীপুরে? কেননা মোহামেডানের পরবর্তী তিন ম্যাচ চট্টগ্রাম আবাহনী, রহমতগঞ্জ ও বাদ্রার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে। খেলাগুলো হবে কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে। শেষ ম্যাচ ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের বিপক্ষে গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে।
এখানে আবার দেশের প্রখ্যাত ফুটবলার বাদল রায়ের স্মৃতি ভেসে ওঠে। কুমিল্লা যেমন মোহামেডানের হোম ভেন্যু। তেমনি আবার বাদল রায়ের ঘরের মাঠ। কুমিল্লা জেলাতেই তার জন্ম। ছোট বেলায় এ স্টেডিয়ামে খেলেই তিনি ফুটবলার হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে তার স্বপ্নের দল মোহামেডানে যোগ দেন। এরপর আর কোথাও যাননি লোভনীয় অফার পাওয়ার পরও। মোহমেডানে অনেক তারকা খেলেছেন। তবে বাদল রায়ের নামটি উচ্চারিত হয় গর্বের সঙ্গে। তিনি ছিলেন মোহামেডানের রত্ন। অনেক শিরোপা এসেছে তারই নৈপুণ্যে বা নেতৃত্বে। অবসরে যাওয়ার পরও মোহামেডানের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। ক্যাসিনোকাণ্ড মোহামেডানের ইমেজে আঘাত এলেও সংগঠক বাদলের সাহসী ভূমিকায় তা কেটে ওঠে। সাবেক ফুটবলারদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পরই দলটি যেন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। কুমিল্লাকে প্রথম হোম ভেন্যু করার পেছনে বাদলই বড় ভূমিকা রাখেন। ২০২০ সালে ২২ নভেম্বর এ প্রখ্যাত ফুটবলার না ফেরার দেশে চলে যান। কিন্তু বাদল রায়ের নামটি কখনো মোহামেডানে মুছে যাওয়ার নয়। সেই বাদল রায়ের মাঠে তার প্রিয় দল মোহামেডান শিরোপার উৎসব করলে তা হবে ঐতিহাসিক। টানা তিন ম্যাচই কুমিল্লাতেই। এখানে দুটি জিতলে উৎসবটা হবে বাদল রায়ের ঘরে। নাকি গাজীপুরে শেষ খেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।