২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক। এরপর ২৫ বছর পেরিয়েছে। বাংলাদেশ দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা পায় ২৬ জুন, ২০০০ সালে। দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ এখন নিয়মিত টেস্ট খেলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টেস্ট অভিষেকের রজতজয়ন্তী পালন করছে। বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার নেতৃত্বে রজতজয়ন্তী পালন করছে বিসিবি। অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য ও ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়া করেছেন। সাবেক ওপেনার গর্বিত, একজন টেস্ট ক্রিকেটার হতে পেরে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আসিফ ইকবাল
অভিষেক টেস্টের আগের রাতে আপনার কেমন লাগছিল?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : আমরা তখন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলতাম। টেস্ট খেলা দেখতাম টেলিভিশনে। আমরা যখন জানলাম, টেস্ট খেলব, তখন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম। টেস্ট খেলব ভাবনায় দারুণ উত্তেজিত ছিলাম। প্রতিপক্ষ ভারত তখন বিশ্বসেরা দলগুলোর একটি। শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো ক্রিকেটার থাকার পরও নার্ভাস ছিলাম না। তিন দিনের টেস্ট শেষ হলেও আমি আনন্দিত হতাম। কারণ, আমরা টেস্ট খেলছি, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি, আমার পরিবার, আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা বলতে পারবেন, আমি টেস্ট ক্রিকেটার, এটা স্বপ্নের মতো ছিল। আমি টেস্ট ক্রিকেটার, এটাই গর্বের।
পুরো দলের আবহটা বলবেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : দলের সবাই ভীষণ উত্তেজিত ছিল। ক্রিকেটার, কোচ, স্টাফ সবার মাঝেই একটা আনন্দমুখর পরিবেশ ছিল। টেস্ট খেলার উত্তেজনায় সবাইকে ভীষণ উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল।
অভিষেক টেস্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের ইনিংসটিকে কী বলবেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : এক কথায় অসাধারণ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করা অনেক বড় প্রাপ্তি। অনেক গ্রেট ক্রিকেটারও যা পারেননি, সেটা বুলবুল ভাই করেছেন। ইতিহাসের পাতায় পাকাপাকি হয়ে গেছেন। তার ইনিংসটি ছিল অসীম ধৈর্যের প্রতীক। টেস্ট ব্যাটিং এমনই হওয়া চাই।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কোথায় দেখতে চান?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : গত ২৫ বছরে যতটা এগোনো দরকার ছিল, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ঠিক ততটা এগোয়নি। যাই হউক না কেন, আমরা নিয়মিত টেস্ট খেলছি। এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি চাইব টেস্টে বাংলাদেশ ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলুক। একটা কথা না বললেই নয়, আমাদের সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা যখন খেলতেন, তখন আমাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড ছিল। তাদের জায়গায় নতুন ক্রিকেটার না এলে আমাদের জন্য কঠিন হবে। ভবিষ্যতে তাদের জায়গা পূরণ হবে কি না, আমি জানি না।
বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটার কে?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : আমাদের অনেক ভালো ব্যাটার রয়েছে। তবে আমার দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটার তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানও ভালো ব্যাটার। এখন নাজমুল হোসেন শান্ত খেলছেন। কিন্তু তামিম সবার সেরা।
সেরা টেস্ট বোলার?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : হাসিবুল হোসেন শান্তের কথা বলব। দারুণ আগ্রাসি মেজাজের বোলার ছিলেন। যখন টেস্ট খেলতেন, তখন মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন অসাধারণ। মাশরাফি বিন মর্তুজাও ছিলেন ভীষণ আক্রমণাত্মক বোলার।
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ইনিংস কোন ক্রিকেটারের?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : অনেক ইনিংসের কথা বলা যায়। ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসও রয়েছে অনেক। আমার দৃষ্টিতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ইনিংস তামিম ইকবালের, লর্ডসে (২০১০ সালে তামিম ১০৩ রান করেছিলেন) যেটা খেলেছিলেন।
সেরা বোলিং স্পেল?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : সত্যি বলতে বোলিংটা সেভাবে দেখা হয় না। তারপরও আমার কাছে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ১৩২ রানে ৬ উইকেট নেওয়ার স্পেলটাই সেরা।
আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট জয় কোনটি?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : আমরা এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানকে হারাচ্ছি। তারপরও আমি বলব টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের সেরা জয় ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম জয়।
আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার...
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত : আমার ৩ টেস্টের ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ হতে পারত। তবে আফসোস নেই ক্যারিয়ার লম্বা না হওয়াতে। সে সময়কার টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকেই আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেননি। সেটা আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল। আমি সেজন্য প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অবসরের ইচ্ছা জানিয়েছিলাম।