খেলা শেষ করেই মাঠ ছাড়তে পারতেন লিটন দাস। অহেতুক তাড়াহুড়া করে জয়ের বন্দরে পৌঁছার মাত্র ২ রান আগে বোল্ড হন টাইগার অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ৩৯ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। টাইগার অধিনায়ক ও তাওহিদ হৃদয়ের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭০ বলে ৯৫ রানের জুটিতে ৭ উইকেটের বড় জয় পায় হংকংয়ের বিপক্ষে। একই সঙ্গে ১১ বছর আগে ২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে হারের প্রতিশোধও নেয় বাংলাদেশ। লিটনদের পরের ম্যাচ একই ভেন্যুতে আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
টার্গেট ১৪৪ রান। ওভারে ৭.২ রান। টি-২০ ক্রিকেটে খুব বড় নয়। তার পরও বাংলাদেশের দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ তামিম ৩ ওভারে ২৬ রানের ভিত দেন। ১৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করেন পারভেজ। আউট হওয়ার আগে এক পঞ্জিকা বর্ষে ২৩ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন তিনি। এক পঞ্জিকা বর্ষে ২৩টি ছক্কা মারেন তানজিদও। দুই ওপেনার ৬ ওভারের ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে আউট হন। দুজনের বিদায়ের পর হাল ধরেন অধিনায়ক লিটন ও তাওহিদ। দারুণ ছন্দে থাকা লিটন গতকাল পেছনে ফেলেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। টি-২০ ক্রিকেটের টাইগার অধিনায়ক লিটন এখন দুইয়ে। ১২৯ ম্যাচে ২৫৫১ রান করে সবার ওপরে সাকিব আল হাসান। তিনে থাকা মাহমুদুল্লাহর রান ১৪১ ম্যাচে ২৪৪৪। লিটনের রান ১১১ ম্যাচে ২৪৯৬।
‘এশিয়া কাপে এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ। উইকেট আচরণ কেমন হবে আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। যে কারণে শুরুতে বোলিং করতে চাই। টানা তিনটি সিরিজ জিতেছি। কিন্তু সেসব ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে। আমরা খেলছি তিন পেসার, দুই স্পিনার ও ছয় ব্যাটার নিয়ে। আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের আচরণ বুঝতেই টস জিতে ফিল্ডিং নেন। ‘ডেথ গ্রুপ’ থেকে সুপার ফোরে খেলতে রানরেট বাড়ানো যেখানে জরুরি, সেখানে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েও কেন ফিল্ডিং নিয়েছেন, তার ব্যাখ্যায় কথাগুলো বলেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা টি-২০ সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। গতকাল আবুধাবিতে খেলেছে আইসিসি সহযোগী দেশ হংকংয়ের বিপক্ষে। লিটনদের কাছে হংকং অপরিচিত দল। কিন্তু টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অপরিচিত নয়। দুই দল এর আগে পরস্পরের বিপক্ষে একটি করে ওয়ানডে ও টি-২০ খেলেছে। ২০০৪ সালে এশিয়া কাপে ওয়ানডে এশিয়া কাপে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলছিল। জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে টি-২০ বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে হেসেছিল হংকং। সেই ম্যাচ হারের দুঃস্বপ্ন নিয়ে লিটন বাহিনী গতকাল হংকংয়ের মুখোমুখি হয় আবুধাবিতে। স্পিনার মেহেদি ও মুস্তাফিজ ভালো বোলিং করেও ছিলেন উইকেটশূন্য। টাইগার বোলিং ওপেন করেন মেহেদি। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের সুযোগও সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার্স রিভিউতে বেঁচে যান ব্যাটার জিশান। ইনিংস শেষে মেহেদির স্পেল ৪-০-২৮-০। তাসকিন নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় আঘাত হানেন। তার বলে আনসি রাথ উইকেটের পেছনে লিটনের গ্লাভসবন্দি হন। যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞ বাবর হায়াত ও জিশান তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪১ রান যোগ করেন ৬.৫ ওভারে। বাবরকে আউট সুইংয়ে বোল্ড করেন তানজিম। আউট হওয়ার আগে বলে ছক্কা মারেন বাবর। জিশান ও বাবর জুটিতে হংকং ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে রান করে ২ উইকেটে ৩৪। তানজিম ও মুস্তাফিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১০ ওভারে আইসিসি সহযোগী দেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৬৪ রান। অভিজ্ঞ নিজাকাত খান ও অধিনায়ক ইয়াসিম মর্তুজার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ৭৯ রান যোগ করে হংকং। নিজাকাতের ৪০ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৪২ ও ইয়াসিমের ১৯ বলে ২৮ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৩ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
হংকং : ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (জিশান ৩০, বাবর ১৪, নিজাকাত ৪২, মুর্তজা ২৮; তাসকিন ৪-০-৩৮-২, তানজিম ৪-১-২১-২, রিশাদ ৪-০-৩১-২)
বাংলাদেশ : ১৭.৪ ওভারে ১৪৪/৩ (পারভেজ ইমন ১৯, তানজিদ তামিম ১৪, লিটন দাস ৫৯, তাওহিদ হৃদয় ৩৫; সুকলা ৩-০-৩২-১, ইকবাল ৩.৪-০-১৪-২, মুর্তজা ৪-০-৩৯-০)
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : লিটন কুমার দাস