এক দল জিতবে, আরেক দল হারবে। এটা খেলার স্বাভাবিক নিয়ম। জয়ী দল উৎসব করবে, উচ্ছ্বাস করবে, আনন্দে মেতে উঠবে, উদ্বাহু নৃত্যে নাচবে। খুবই স্বাভাবিক। পরাজিত দলের শির নিচু হয়ে থাকবে, অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু খেলা যখন জীবনের অংশ হয়ে উঠে, তখন খেলা আর খেলার সীমানায় আটকে থাকে না। হয়ে উঠে জীবনের কবিতা। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরশু পাকিস্তানের কাছে অবিশ্বাস্য হারের পর ক্রিকেটপাগল মানুষের হৃদয়ে যে ভাঙচুর হয়েছে, যেভাবে কান্নায় ভেসেছেন, যেভাবে বেদনাবিধুর হয়েছেন, তাতে ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কবিতা।
খুব বেশি আগের কথা নয়। দুই যুগ আগেও ক্রিকেট হাঁটতো ফুটবলের পিছন পিছন। এখন ক্রিকেট সবকিছুকে ছাপিয়ে সবার উপরে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করার পরও হেরে যায় পাকিস্তানের কাছে। এ হার মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৬ রান করার পরও বেশকিছু কারণ খুঁজে বের হয়েছে হারের। প্রথমেই বলতে হচ্ছে, দুর্বল বোলিং বিভাগ। একাদশ নির্বাচন, ক্ষুরধার অধিনায়কত্বের অভাব। গত দুই মাস ধরে ক্রিকেটাররা সমালোচিত হচ্ছিলেন টানা ব্যাটিং ব্যর্থতায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট ছাড়া পুরো সিরিজেই ব্যর্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। এশিয়া কাপেও ছিল সেই ধারাবাহিকতা। শুধুমাত্র ভারতের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে মুখ রক্ষা হয়েছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা সবকিছুকে পাথর চাপা দেন ৩ উইকেটে ৩২৬ রান তুলে। এর মধ্যে সেঞ্চুরি করেন এনামুল হক বিজয় (১০০), হাফসেঞ্চুরি করেন মুমিনুল হক সৌরভ (৫১), ইমরুল কায়েশ (৫৯), মুশফিকুর রহিম(৫১*) ও সাকিবের ১৬ বলে ৪৪*। ব্যাটিং নিয়ে কোনো ক্ষেদ, আক্ষেপ নেই ক্রিকেটপ্রেমীদের। পর্বতসমান স্কোর করে হারের পর দলের পরিকল্পনা, অধিনায়কত্ব, দল নির্বাচন নিয়ে কথা উঠেছে।
আগের ম্যাচে ১০ ওভারে ৪৪ রানে ২ উইকেট নেন আরাফাত সানী। একই ম্যাচে ৫৭ রান দিয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক রাজ। পরশু ম্যাচে পারফরম্যান্সের বিচারে অটোমেটিক চয়েজ হওয়ার কথা সানীর। কিন্তু একাদশ নির্বাচনে অভিজ্ঞতার কথা বলে নেওয়া হয় রাজ্জাক রাজকে। সেই রাজ্জাক যে অভিজ্ঞতার দাম দিলেন যেভাবে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে তার ক্যারিয়ার অন্তিমলগ্নে কি না? শহীদ আফ্রিদি ২৫ বলে ৫৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পরও এক পর্যায়ে শেষ তিন ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩১ রান। তখন ব্যাট করছিলেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলম। সে সময় অধিনায়ক বোলিংয়ে আনেন রাজ্জাককে। যিনি আগের ৮ ওভারে রান দিয়েছেন ৫৪। অথচ পুরো ম্যাচে জিয়াউর রহমানকে এক ওভারও বোলিং করাননি অধিনায়ক। কেন? ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, জিয়াকে পছন্দ নয় অধিনায়কের। রাজ্জাক রাজ বিকেএসপির ছাত্র। তাই বাড়তি টান। কিন্তু রাজ্জাককে বোলিং করানোর ফল কি হলো? ১৮ রান দেন বাঁ হাতি স্পিনার। তখনই ম্যাচ ফসকে যায় বাংলাদেশের হাত থেকে। চাপের মুখে যেখানে ঠাণ্ডা মাথায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, সেখানে মুশফিক ভুল করেন রাজ্জাককে এনে। এছাড়া জিয়াকে বোলিং না করিয়ে। তার উপর শেষ ওভারে ওয়াইডিশ মিড উইকেট খালি রেখে ফিল্ডিং সেট করায়ও অনেকে অবাক হয়েছেন। অথচ আল-আমিনের স্লো বাউন্সারে ওয়াইডিশ মিড উইকেট দিয়েই বাউন্ডারি মারেন উমর। তার অধিনায়কত্বে ছিল না কোনো পরিকল্পনা। বোলিং চেঞ্জিং ও ফিল্ড প্লেসিংও ভালো হয়নি ম্যাচে। কাছাকাছি এসেও রাশটুকু ধরে রাখতে না পারা এই প্রথম নয়। আফগানিস্তান ম্যাচে চালকের আসনে বসে থেকেও সামান্য ভুলে পারেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো সিরিজেই ব্যর্থ হয়েছে চালকের রশি ধরে নিতে। টি-২০ সিরিজের দুটি ম্যাচ হেরেছে শেষ বলে। প্রথম ওয়ানডেতে চালকের আসনে বসে থেকেই অতিরিক্ত আত্দবিশ্বাসে ডুবেছে। ক্রিকেটাররা একের পর এক ভুল করে হারছেন। তাতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর। দলের হারে আর্তনাদ করছেন তারা প্রতিনিয়ত। এ থেকে মুক্তি চান তারা। আনন্দের কবিতা লিখতে চান সবুজ বাংলার আনাচে-কানাচে।