পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু কাব্য-প্রবন্ধে বেশ উচ্চারিত একটি উক্তি, আমরা পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু না দেখলেও কচু পাতায় শিশির বিন্দু বা জলের ফোঁটা অনেকেই দেখেছি। চোখের পাতায় কলেস্টেরলের বিন্দু একই ধরনের হলেও এর মাহাত্দ্য কিন্তু মোটেই সুখকর কিছু নয়। যাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় দুষ্ট কলেস্টেরল থাকে তাদের মধ্য কারও কারও এ ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণত মধ্যবয়সী মহিলাদের চোখের পাতায় এ ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তবে পুরুষদের ক্ষেত্রেও তা পরিলক্ষিত হতে পারে। যাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় কলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে তাদের অনেকের চোখের চারদিকে চামড়ায় কলেস্টেরল জমা হয়ে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যাকে জেন্থেল্যাসমা বলে। খুব ছোট আকার থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পেতে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় আকার ধারণ করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় দাগ বা দাগগুলো খুবই ছোট থাকে। চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে হালকা বর্ণ ধারণ করে, চারদিকে স্পষ্ট মার্জিন থাকে মাঝখানের অংশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়। স্বাভাবিক চামড়া থেকে এর কমনীয়তা কমে কিছুটা শক্ত অবস্থা ধারণ করে, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে এর অনুভূতি আলাদা মনে হয়। প্রকৃত অবস্থা হলো এসব দাগের জায়গায় চামড়ায় কলেস্টেরলের ক্লিস্টাল ডিবি/স্তূপ হিসাবে জমা হতে থাকে এবং দিনে দিনে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বিদ্যমান শুধু তাদের শরীরেই এ ধরনের দাগ দেখা দিয়ে থাকে।
কলেস্টেরল : এক ধরনের মোমের মতো নরম চর্বি জাতীয় পদার্থ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে। বিশেষ করে মস্তিষ্কে, স্নায়ুতন্ত্রে, চামড়ায়। বিভিন্ন হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থিতে বিশেষ করে সেঙ্ হরমোন ও স্টেরয়েড হরমোন উৎপন্নকারী গ্রন্থিতে। এই কলেস্টেরল দুভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এক-প্রাণিজ চর্বি জাতীয় খাদ্যের মাধ্যমে (২৫%), দুই-যকৃত বা কলিজা অন্য খাদ্যবস্তুর নির্যাস থেকে কলেস্টেরল দেহের জন্য তৈরি করে থাকে (৭৫%)। তবে অতি মাত্রার কলেস্টেরল বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ্যতার জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।