অভিষেকের পর থেকেই দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হয়ে উঠেছিলেন নাসির হোসেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে বহু জয় উপহার দিয়েছেন দলকে। তাই ভক্তরা আদর করে ডাকেন 'দ্য ফিনিশার' নামে। অথচ অফ ফর্মের জন্য সেই নাসিরকে দর্শক হয়ে দেখতে হয়েছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। জিম্বাবুয়ে সিরিজেই অভিষেক সাব্বির রহমান রুম্মনের। অভিষেক সিরিজেই আলো ছড়ান দুর্দান্ত ব্যাটিং ও ফিল্ডিং করে। প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন নাসিরের। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সাত নম্বর পজিশনের অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেন দুজনে। দুজনেই সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপ খেলার। সেরা একাদশে কে খেলবেন, এ নিয়ে দোটানায় টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কোনো চিন্তা নেই। দুজনের কেউ কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবতে রাজি নন। দুজনেই চাইছেন বিশ্বকাপে দলের জয়ে অবদান রাখতে।
নাসিরের অভিষেক ২০১১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েতে। অভিষেকের পর হয়ে উঠেন দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ফর্ম হারিয়ে ফেলায় জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগই পাননি। সুযোগ না পাওয়ায় মনে হয়েছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলা হবে না। কিন্তু প্রিমিয়ার ক্রিকেটে অসাধারণ ব্যাটিং করে জায়গা করে নেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। স্কোয়াডে ফেরায় এখন ক্রিকেটপ্রেমীরা চাচ্ছেন পুরনো নাসিরকে পেতে। নাসিরও চাচ্ছেন নিজেকে আগের মতো মেলে ধরতে, 'আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনি আছি আমি। নিজেকে পুরনো ছন্দে ফিরে পাওয়া নির্ভর করে ম্যাচের ওপর। প্রিমিয়ার ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এক নয়। শক্তির পার্থক্য ব্যাপক। যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচে পারফর্ম করতে পারি, তাহলে ভাববো নিজেকে ফিরে পেয়েছি।' জিম্বাবুয়ে সিরিজে অভিষিক্ত সাব্বিরের আলাদা পরিচয় দুর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে। এর মধ্যেই তিনি মন জয় করে নিয়েছেন ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসালের। গত ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে চট্টগ্রামে ৪৪ রানের ইনিংস খেলার পরই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সাব্বিরের। টিম ম্যানেজমেন্ট তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে রেখেছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছেন। সুযোগ পেলেও আলাদা কোনো টার্গেট সেট করেননি এখনো, 'আমি টার্গেট সেট করিনি। আমি পরিস্থিতি বুঝে টার্গেট সেট করি।'
একাদশে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হবেন কোন স্পিনার, এ নিয়ে বিস্তর ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। একই রকম মধুর সমস্যা নাসির ও সাব্বিরকে নিয়ে। দুজনেই লেট মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেন। তাই বলে নিজেদের প্রতিপক্ষ ভাবতে নারাজ দুজনে। সাব্বিরকে প্রতিপক্ষ নয় বন্ধু হিসেবে দেখেন নাসির, 'সাব্বিরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি বলবো না। আমার কাজ ভালো খেলা। বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছি। চেষ্টা করব কাজে লাগাতে। সত্যি বলতে কী রুম্মনের বিষয়ে আমি তেমন কিছু ভাবিনি।' নাসিরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবেননি সাব্বির, 'আমি ও নাসির একই ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। ওর সঙ্গে প্রতিযোগিতার কথা কোনোদিনই ভাবিনি। সুযোগ পেয়েছি। দুজনে খেলতে পারব ভেবে ভালো লাগছে। কেননা আমরা দুজনে খুব ভালো বন্ধু।'
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন নিয়ে চিন্তিত পুরো দল। সেখানকার উইকেটে বল মুভ করে বেশি। বাউন্স ও গতিও বেশি। এমন উইকেটে স্ট্রোক খেলা ব্যাটসম্যানরাই সফল। এটা ভালো করেই জানেন নাসির ও সাব্বির। বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে অনুশীলনে তাই সাইড স্ট্রোক খেলছেন বেশি করে সাব্বির, 'ভালো করতে হলে প্রস্তুতি ভালো থাকা দরকার। আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার বাউন্সি উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা অনুশীলনে সাইড স্ট্রোক বেশি করে খেলছি।' নিজেদের প্রতিপক্ষ মানছেন না। একসঙ্গে ম্যাচ খেলার ইচ্ছা রয়েছে নাসিরের, 'আপনারা যেভাবে বলছেন, সেভাবে প্রতিযোগী নেই। তবে প্রতিযোগী রয়েছে পারফরম্যান্স করার তাগিদে। আমি চাই দুজনে এক সঙ্গে খেলি।' সাব্বির সরাসরি অস্বীকার করেছেন প্রতিযোগিতার, 'নাসিরের সঙ্গে আমার কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। দুজনের খেলার ধরনে পার্থক্য রয়েছে। দলের জেতাই আমার কাছে মুখ্য। তবে দুজনেই খেলতে চাই এক সঙ্গে।'
দুজনে স্বীকার না করলেও অদৃশ্য এক লড়াই রয়েছে। সেই লড়াইয়ে কে জিতেন, কে হারেন সেটা দেখার বিষয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। তবে এটা সত্যি, দুজনকে একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়তে হবে কোনো সন্দেহ নেই।