বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষ হতে চলেছে। আগামীকাল ফাইনালের মাধ্যমে আসরের পর্দা নামছে। প্রায় ১৬ বছর পর বাংলাদেশে ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে। ঢাকার ঘরোয়া ফুটবলে দর্শক নেই বললেই চলে। পেশাদার লিগে বড় বড় ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শক আসছে না। আগে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে দুপুরেই গ্যালারি ভরে যেত। লোকাল আসরে সাড়া নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে ঠিকই দর্শক আসছে। এ পর্যন্ত যে কয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে, তাতে দর্শকের দেখা মিলেছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে সিলেট, যশোর ও রাজশাহীতে উপচে পড়া দর্শকের সমাগম ঘটেছে। দেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের দেখাই মিলছিল না। অনেকের সংশয় ছিল, এতদিন পর বঙ্গবন্ধু কাপ হওয়ায় সাড়া পড়বে কি-না। এটা ঠিক বাইরে থেকে আসা পাঁচটি দলই তেমন শক্তিশালী নয়। একমাত্র বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় দল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। বাহরাইনকে টপ ফেবারিট দল ধরা হলেও তারা গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে। শ্রীলঙ্কারও একই অবস্থা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলেছে।
আর মাত্র কয়দিন পরই বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা শুরু হবে। বাংলাদেশে এখন ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কাপে দর্শক হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় ছিল। তারপর আবার টিকিটের মূল্য নির্ধারণ ছিল ৮০ ও ৫০ টাকা। সত্যি বলতে কি, বাফুফে কর্মকর্তারাও চিন্তায় ছিলেন দর্শক হবে কি-না? বঙ্গবন্ধু কাপের আয়োজন নিয়ে অনেক ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক যে, আসর বেশ জমজমাট হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচে দর্শক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। সিলেটে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলায় গ্যালারি ভরপুর ছিল। ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দর্শক হয়েছিল প্রচুর। গতকাল বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়। শুক্রবার ছুটির দিনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যেন দর্শকের ঢল নেমেছিল। অনেক দিন পর মাঠে এত দর্শক দেখা গেল। ভালো ফুটবল হলে দর্শক যে হবে তার বড় প্রমাণ এবারের বঙ্গবন্ধু কাপ। একে তো ১৬ বছর পর টুর্নামেন্ট, তারপর আবার দেশের অবস্থা ভয়াবহ। এ অবস্থায় টুর্নামেন্ট যে জমবে বা দর্শক আসবে তা কেউ ভাবতেও পারেননি। ফুটবল যে বাংলার মানুষের প্রাণের ও মনের খেলা তা প্রমাণ ছিল জাতির জনকের নামকরণে টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু কাপ। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে প্রতি বছরই বঙ্গবন্ধু কাপ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবায়িত করতে পারেন না। ২০০৮ সাল থেকেই বলে আসছেন বঙ্গবন্ধু কাপ হবে। অথচ সেই আসর নামল ২০১৫ সালে। যাক, শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট মাঠে গড়িয়েছে- এটাই বড় কথা। সত্যি সত্যি যদি প্রতি বছর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয় তাহলে দেশের ফুটবলে দুর্দিন কেটে যাবে। বাফুফের কর্মকর্তাদের উপলব্ধি করা উচিত ভালো ফুটবল হলে দর্শকের ঢল নামবেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা যদি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন তাহলে ফুটবল আর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না।