বাজে মাঠ বা খেলার অনুপযোগী। বিতর্কটা সবসময় ওঠে। কিন্তু বাফুফে বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মাঠে দাঁড়ানো মুশকিল। যেখানে কিনা দেশসেরা পেশাদার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্লাবগুলো আপত্তি জানাবে তারও উপায় নেই। কেননা মাঠ কোথায়? তাই বাফুফের শিডিউল রক্ষা করতে ক্লাবগুলো খেলতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। পেশাদার লিগের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দলের আলাদা ভেন্যুর প্রয়োজন রয়েছে। এটাও ঠিক যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১০টি দলের আলাদা মাঠ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু পেশাদার লিগে শুরুর দিকে চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও ফেনীতে ম্যাচ হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাও হোম গ্রাউন্ড হিসেবে গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামকে বেছে নিয়েছিল। এবার শুধু চট্টগ্রাম আবাহনীই এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে বেছে নিয়েছে।
কথা হচ্ছে শুধু চট্টগ্রাম কেন? ফেনী সকার থাকার পরও ফেনী স্টেডিয়ামকে হোম গ্রাউন্ড হিসেবে বেছে নেওয়া হলো না কেন? আগে তো এখানে লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরাও চাই ঢাকার বাইরে লিগ হোক। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ অধিকাংশ ক্লাব ঢাকার বাইরে খেলতে আগ্রহী নয়। তাদের একমাত্র পছন্দ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। হতে পারে ক্লাবগুলোর আপত্তি রয়েছে। কিন্তু ফেডারেশন তা মানবে কেন? তা ছাড়া পেশাদার লিগের অন্যতম শর্ত হচ্ছে দলগুলোর হোম গ্রাউন্ড থাকতে হবে। আছে, কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব মিলে সবারই একটা গ্রাউন্ড বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। শুধু কি পেশাদার লিগ, ফুটবলের সব আসরই তো এখানে হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দেশে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়া ফুটবলের কোনো মাঠ নেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থাকার পরও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলো ফতুল্লা, বগুড়া, রাজশাহী ও বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ক্রিকেট পারলে ফুটবল কেন পারবে না। তা ছাড়া পেশাদার লিগ তো কোনোভাবেই ঢাকাকেন্দ্রিক হতে পারে না। এখানে বড় উদাহরণ হতে পারে একসময়ে অনুষ্ঠিত নিটল-টাটা জাতীয় লিগ। ফাইনাল খেলা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হলেও সেই লিগের অধিকাংশ ম্যাচ বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হতো। তারকা ফুটবলারদের খেলা দেখতে ঢাকার বাইরে উপচে পড়া দর্শকের সমাগম ঘটত। পেশাদার লিগে ১০ দলের ১০টি ভেন্যুও দরকার নেই। এক্ষেত্রে বিভাগীয় স্টেডিয়ামগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। কোনো টুর্নামেন্ট নয়, প্রীতি ম্যাচকে কেন্দ্র করে সিলেট, যশোর ও রাজশাহী স্টেডিয়ামে যে দর্শক সমাগম ঘটে তা কি বাফুফে ভুলে গেছে? ক্লাবগুলো হয়তো নানা সমস্যার কথা ভেবে ঢাকার বাইরে খেলতে চায় না। কিন্তু বাফুফে কি তাদের বুঝিয়েছে। ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা বা বরিশালে পেশাদার লিগের উত্তেজনা কি বাড়ত না। আসলে এ ব্যাপারে কর্মকর্তারা কোনো উদ্যোগই নিচ্ছেন না। শুধু উত্তেজনা নয়, বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে লিগ অনুষ্ঠিত হলে তরুণরা ফুটবল খেলার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠত।
এক বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কত চাপ সহ্য করবে? পেশাদার চ্যাম্পিয়নস লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ, সুপারকাপ, স্কুল ফুটবল এমনকি মহিলাদের লিগও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লাগাতার খেলা হলে এমনিতেই মাঠের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আবার বর্ষায় চেনায় যায় না এ কি মাঠ না ধানক্ষেত! ডিজিটাল যুগে ঘাসের মাঠে ফুটবল কি মানা যায়? উন্নত দেশগুলোর কথা বাদই দিলাম, প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা সল্টলেক স্টেডিয়ামে এখন কি ঘাসের মাঠে খেলা হয়। অনেক আগেই তারা কৃত্রিম বা অ্যাসটো টার্ফ মাঠ তৈরি করেছে। তা ছাড়া তাদের আইলিগও কলকাতাকেন্দ্রিক নয়। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে খেলতে যাচ্ছেন ফুটবলাররা।
দেশের ১ নম্বর জাতীয় স্টেডিয়াম। সেই হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অ্যাসটো টার্ফ বসানো হয়নি তা অবাকই বলা যায়। এ ব্যাপারে বাফুফের গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, অর্থ কোনো ফ্যাক্টর নয়। উদ্যোগ নিলেই স্পন্সর পাওয়া যাবে। তাহলে বাফুফে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন? কর্মকর্তারা কি চিন্তা করে দেখেছেন এমন কাদাভরা পিচ্ছিল মাঠে খেলায় খেলোয়াড়রা যে কোনো সময় বড় ধরনের ইনজুরির শিকার হতে পারেন। এমনিতেই ফিটনেসের অভাব। তারপর আবার এমন অনুপযুক্ত মাঠে খেলাতে ফুটবলারদের মানও নষ্ট হচ্ছে। বাফুফে জেনেশুনে এ ঝুঁকি নিচ্ছে কেন? এর সমাধান কি তাদের কাছে নেই?