এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কলসিন্দুরের মেয়েদের লোকাল বাসে চেপে বাড়ি ফেরার বিষয়টি নিয়ে যখন তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে, ঠিক তখনই গোল রক্ষক তাসলিমা আক্তারের বাবা সবুজ মিয়াকে(৫৫) মারপিট করে বিষয়টিকে আরও উস্কে দিলেন কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীর চর্চার শিক্ষক জোবেদ আলী তালুকদার (৪২)।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় একটি বাজারের ফরহাদ খলিফার দোকানের সামনে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটান শিক্ষক জোবেদ। এসময় ওই শিক্ষকের সাথে তার সাঙ্গপাঙ্গও ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই শিক্ষকের মারপিট থেকে উদ্ধার করা হয় তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়াকে।
তবে স্থানীয় গামারীতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ''তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়া ওই শিক্ষককে বাজারে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। এজন্যই হয়তো তিনি মারপিটের স্বীকার হয়েছেন।''
তাসলিমা আক্তারের বাবা সবুজ মিয়া জানান, ''আজ দুপুরে (বুধবার) স্কুলে ডেকে নিয়ে আমাদের অপমান করেন শিক্ষক জোবেদ। এ বিষয়টি নিয়ে কলসিন্দুর প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের সাথে সন্ধ্যায় কথা বলছিলাম আমি ও সাজেদা, মাহমুদা, নাজমার বাবা এবং মার্জিয়ার ভাই। এসময় হঠাৎ করেই ওই শিক্ষক এসে আমাকে এলোপাতাড়ি লাথি ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এছাড়াও আমাকে আজ রাতের মধ্যে শেষ করে দেবার হুমকিও দেন।''
তবে এসব বিষয় জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক জোবেদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া নারী ফুটবলারসহ অসংখ্য ফুটবল প্রেমী ও সাধারণ মানুষ এমন ঘটনায় হতভম্ভ। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ গোটা ময়মনসিংহে চলছে নিন্দার ঝড়। অনেকেই বলছেন ফুটবলের মহাকাব্যের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে যখন লেখা হচ্ছে আমাদের মেয়েদের গৌরবময় কৃতিত্ব তখন তাদেরই অভিভাবকের লাঞ্চিত হওয়া কোনভাবেই মানা যায় না।
ধোবাউড়া থানার ওসি শওকত আলম জানান, ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বাসায় ফোর্স পাঠিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আটকের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিভাবক ও কলসিন্দুর হাই স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলভিত্তিক ৪৫তম গ্রীষ্মকালীন প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে খেলার জন্য বুধবার দুপুরে কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খেলোয়াড় ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনায় বসেন শিক্ষকরা। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারবে না বলে জানায় মেয়েরা। ফুটবলাররা বলেন, ফেডারেশন থেকে আমাদের ১৬ তারিখ ঢাকায় থাকতে বলা হয়েছে। আর ১৭ তারিখ বাফুফে ভবনে আমাদের সংবর্ধনা রয়েছে। এরপর থেকেই আমাদের সাফ টুর্নামেন্টের জন্য ক্যাম্প শুরু হবে। এমন কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান শিক্ষক জোবেদ আলী তালুকদার।
এ সময় তিনি বলেন, ''তোরা যদি কোনদিন এই স্কুলের কথা মুখে নিস তোদেরকে জুতার বাড়ি দিয়ে চাপার দাত খুলে ফেলব।''
অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ''তোমরা কাগজে সই দিয়ে স্কুল থেকে এদের নিয়ে যাও, আর জীবনে এ স্কুলে আসবা না।''
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ