কর্মজীবনের ব্যস্ততা শেষে মানুষ যখন বিশ্রামের আশ্রয় খোঁজে, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী এক পথে হেঁটেছেন হাতেমপুর গ্রামের মো. রিয়াজুল আলম খান। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত এই উপ-পরিচালক, অবসরের জীবনে নিজেকে গুটিযে না রেখে, নিজ গ্রামেই গড়ে তুলেছেন এক বিশাল মৎস্য খামার। তার এই উদ্যোগ শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর এবং বেকারত্বের কশাঘাত থেকে মুক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রিয়াজুল আলম খানের বাড়ির পাশেই অবস্থিত হাতেমপুর শাহী মসজিদের সুবিশাল দীঘিটি তার নতুন স্বপ্নের বীজতলা। বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে এই দীঘির জলে তিনি রোপণ করেছেন রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া এবং ব্লাক কার্পের মতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ। কঠোর পরিশ্রম আর যত্নে পরিচর্যার ফসল হিসেবে প্রতি বছর এই খামার থেকে ১০ থেকে ১৩ টন টাটকা মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদন শুধু তার নিজের ভাগ্যই ফেরায়নি, স্থানীয় বাজারে প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ করছে।
রিয়াজুল সাহেবের এই মৎস্য খামার শুধু মাছ চাষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি পরিণত হয়েছে এলাকার বেকার জেলেদের জন্য এক নির্ভরযোগ্য কর্মসংস্থানের উৎসে। যারা একসময় কাজের অভাবে দিন কাটাতেন, আজ তারা এই খামারে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে মো. রিয়াজুল আলম খান নিজেও আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন।
আলাপকালে রিয়াজুল আলম খান এক প্রাণবন্ত হাসিতে বলেন, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর হাতে অফুরন্ত সময় পেয়েছি। এই সময়কে নিছকই অলসতায় না কাটিয়ে আমি ভেবেছিলাম এমন কিছু করব, যা আমার ভালো লাগবে এবং সমাজেরও উপকারে আসবে। মৎস্য চাষের এই উদ্যোগ নিয়ে আমি সত্যিই উপকৃত হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, মাছের সাথে আমার সময়গুলো দারুণ কাটছে, মনে হচ্ছে এক নতুন পরিবার পেয়েছি।
মো. রিয়াজুল আলম খানের এই গল্প আমাদের শেখায় অবসরের অর্থ কেবল বিশ্রাম নয়, এটি নতুন কিছু শুরু করার, নতুন স্বপ্ন দেখার এবং সমাজের জন্য কিছু করার এক সোনালি সুযোগ। তার এই দৃষ্টান্ত হাতেমপুর গ্রামের গন্ডি ছাড়িয়ে আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে শৈলকূপা উপজেলার মৎস্য অফিসার ইমরান হোসেন জানান, রিয়াজুল আলম খানের মাছ চাষের ব্যাপারটি আমার জানা নেই। তবে তিনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আশা করছি আমি নিজেই ঘটনাস্থল গিয়ে তার মাছের খামারটি পরিদর্শন করবো।
বিডি প্রতিদিন/এমআই