সোমবার হোয়াইট হাউজ থেকে ওভাল অফিসে বসেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনে নতুন করে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা, ইউরোপীয় মিত্রদের অর্থায়ন এবং রাশিয়ার ওপর আসন্ন শুল্ক হুমকির ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিল, ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া নীতিতে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। ট্রাম্প এবার কঠোরতার পথে হাঁটতে চান।
কিন্তু ওদিকে মস্কোর স্টক এক্সচেঞ্জে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। ঘোষণার ঠিক পরেই ২.৭ শতাংশ বেড়ে যায় রুশ বাজার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কারণ একটাই—মস্কো আরও কঠোর ও তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করেছিল, যা বাস্তবায়ন হয়নি।
রুশ ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেতস লিখেছে, ট্রাম্পের সোমবারের চমক আমাদের জন্য সুখকর হবে না। তবে ট্যাবলয়েডটি মনে করছে, এই শুল্ক হুমকি উল্টো রাশিয়াকে আরো উজ্জীবিত করবে। মানে রাশিয়ার ফায়দাই হবে বেশি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ট্রাম্পের অন্যতম অগ্রাধিকার। জানুয়ারিতে ফিরে আসার পর শান্তিচুক্তির জন্য উদ্যোগী হন তিনি।
মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানালেও রাশিয়া জানায়, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ না হলে এবং ইউক্রেন তার সেনাবাহিনী গুটিয়ে না নিলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
ক্রেমলিনের মতে, যুদ্ধের মূলে রয়েছে রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর ‘বাহ্যিক হুমকি’। তাদের ভাষায়—এই হুমকির উৎস কিয়েভ, ন্যাটো, এবং 'পশ্চিমা জোট'।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন নয়, বরং রাশিয়াই আক্রমণ করেছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে। এই হামলাই শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ।
এই দীর্ঘ সময় ধরে ‘হ্যাঁ, কিন্তু’ পলিসি রাশিয়াকে কিছুটা সময় দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনও সম্পর্ক উন্নয়ন ও শান্তি আলোচনায় আগ্রহী হয়ে চাপের চেয়ে প্রণোদনাকে প্রাধান্য দিয়েছিল।
ক্রেমলিন সমালোচকরা বরাবরই বলে আসছিলেন, রাশিয়া সময় কিনছে। ট্রাম্প হয়তো ভেবেছিলেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে পুতিনকে রাজি করানো সম্ভব।
কিন্তু স্পষ্টতই তা হয়নি। মস্কো এখনো যুদ্ধের ময়দানে নিজেকে এগিয়ে মনে করছে। তারা বলছে, শান্তি চায়, তবে নিজেদের শর্তে। এসব শর্তের অন্যতম হলো—ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করা।
সোমবার ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট, এই দাবি মানা হবে না। তিনি বলেছেন, “আমি পুতিনের ওপর খুশি নই।”
ট্রাম্পের হতাশা যতই স্পষ্ট হোক, তা একতরফা নয়। রাশিয়াও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ঘিরে আশা হারাতে শুরু করেছে।
মস্কোভস্কি কমসোমোলেতস লিখেছে, ট্রাম্প একধরনের ‘মহত্বের বিভ্রমে’ ভুগছেন। আর তার মুখটা... খুব বড়।
আগামী ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে আপাতত সময় হাতে পেয়েছে মস্কো—যেটা তারা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল