নাসার পাঠানো রোভার পারসিভিয়ারেন্স সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহে একটানা সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত ১৯ জুন, এটি প্রায় ৪১১ মিটার (এক-চতুর্থাংশ মাইলেরও বেশি) পাথুরে পথ অতিক্রম করেছে। এটা এখন পর্যন্ত মঙ্গলে এক দিনে করা সবচেয়ে বড় যাত্রা।
রোভারটি আগের রোভারগুলোর তুলনায় অনেক বেশি গতিশীল। এর ভেতরে থাকা উন্নত স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার (কম্পিউটার প্রোগ্রাম) চলার সময়ই আশপাশের ছবি তুলে বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে প্রতিদিন বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হয়।
আগের রোভার কিউরিওসিটি আর অপরচুনিটি যেখানে থেমে ছবি তুলে পর্যালোচনা করে এগোত, সেখানে পারসিভিয়ারেন্স চলতি পথেই এসব করতে পারে। এতে বিজ্ঞানীদের গবেষণার নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
২০২১ সালে মঙ্গলে নামার পর পারসিভিয়ারেন্স শুরুতে মাত্র ৬.৫ মিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। ধীরে ধীরে রোভারটি কঠিন পথেও চলা শুরু করে। একপর্যায়ে এটি কোনো মানুষের নির্দেশ ছাড়া নিজে নিজেই ৭০০ মিটার পথ অতিক্রম করেছে, যা একটি বড় সাফল্য। রোভারটির মূল লক্ষ্য হলো, মঙ্গলের মাটি ও পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে সেখানে আগের কোনো প্রাণের চিহ্ন ছিল কি না, তা জানা।
গত দেড় মাস ধরে পারসিভিয়ারেন্স ঘুরে দেখছে জেজেরো ক্রেটারের (গহ্বর) প্রান্তে থাকা ক্রোকোডিলেন মালভূমি, যেখানে রয়েছে কাদাযুক্ত পাথর।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পাথরে যদি ফাইলোসিলিকেট (একধরনের খনিজ পদার্থ) পাওয়া যায়, তাহলে বোঝা যাবে, একসময় সেখানে প্রচুর পানি ছিল। কারণ এই খনিজ সাধারণত পানির উপস্থিতিতে তৈরি হয় এবং প্রাচীন জৈব (প্রাণঘটিত) পদার্থ ধরে রাখতে পারে। ফলে সেগুলো থেকে মঙ্গলের অতীত সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।
পারসিভিয়ারেন্স মিশনের উপ-প্রধান বিজ্ঞানী কেন ফারলি বলেন, যদি আমরা এখানে কোনো সম্ভাব্য প্রাণচিহ্ন পাই, তাহলে তা হতে পারে মঙ্গলের একেবারে প্রাচীন সময়ের—যেটা গত বছর ‘চেয়াভা ফলস’ এলাকায় পাওয়া নমুনার চেয়েও পুরোনো।
তিনি আরও জানান, এই কাদাযুক্ত পাথরগুলো নোয়াকিয়ান যুগে (মঙ্গলের সবচেয়ে পুরোনো ভূতাত্ত্বিক যুগ) তৈরি হয়েছিল, এমনকি জেজেরো গহ্বর তৈরিরও আগে।
তবে এই পাথরগুলো খুব নরম ও ভঙ্গুর, সহজেই ভেঙে পড়ে। তাই ভালো নমুনা পেতে হলে রোভারকে সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়। এখন রোভারটির কাছে মাত্র সাতটি নমুনা রাখার টিউব আছে। তাই বিজ্ঞানীরা আগের একটি নমুনা নেওয়া জায়গায় আবার ফিরে গেছেন, যেখানে কাদার উপস্থিতি বেশি ছিল।
উল্লেখযোগ্য যে, মঙ্গলে সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রমের রেকর্ড এখনও অপরচুনিটি রোভারের, যা ২০০৪ সাল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। তবে পারসিভিয়ারেন্সের আধুনিক প্রযুক্তি আর দ্রুত চলার ক্ষমতা দেখে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, রোভারটি একদিন এই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল