দুইটি বিশাল ব্ল্যাক হোল (অত্যন্ত ঘন ও শক্তিশালী মহাজাগতিক বস্তু) একে অপরকে ঘিরে ঘুরতে ঘুরতে ভয়ংকর গতিতে ধাক্কা খেয়ে এক হয়ে গেছে। এই ঘটনা ঘটেছে পৃথিবী থেকে প্রায় ১০০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে, মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির বাইরের কোনো অংশে।
এই সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে আরেকটি আরও বড় ব্ল্যাক হোল, যার ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ২৬৫ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটাই এখন পর্যন্ত ধরা পড়া সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ।
২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত LIGO নামের একটি বিশেষ যন্ত্র দু’টি একসঙ্গে এই তরঙ্গ ধরতে সক্ষম হয়। ওই যন্ত্র মহাকাশের ভেতর সময়-স্থান (space-time)-এর ক্ষুদ্র কম্পন বুঝতে পারে।
সংঘর্ষের সময় দুটি ব্ল্যাক হোলের ভর ছিল সূর্যের চেয়ে ১০৩ ও ১৩৭ গুণ বেশি। তারা একে অপরের চারপাশে ঘুরছিল প্রতি সেকেন্ডে ৪ লাখ বার ঘূর্ণনের গতিতে—যা তাদের জন্য প্রায় সর্বোচ্চ গতিসীমা।
এই ধরনের ধাক্কা থেকে সৃষ্টি হওয়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (gravitational waves) এতটাই সূক্ষ্ম যে, এটা প্রোটনের চেয়েও লক্ষগুণ ছোট এক কাঁপুনি হিসেবে আমাদের যন্ত্রে ধরা পড়ে। যদিও মহাকাশে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ব্ল্যাক হোল দুটি আগেও একাধিক ব্ল্যাক হোলের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। তাই তারা এত ভারী ও ঘূর্ণনশীল। আগেও এমন কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, তবে এবার সেটি সবচেয়ে স্পষ্ট ও বড় ঘটনা।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরা পড়েছে। তবে এর মধ্যে এই সংঘর্ষ সবচেয়ে শক্তিশালী ও বড় পরিসরের।
আগে আমরা শুধু আলো, রেডিও বা ইনফ্রারেড তরঙ্গ দিয়ে মহাবিশ্বকে বুঝতাম। এখন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বুঝে মহাবিশ্বের আরও গভীর ঘটনা জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক হান্নাম বলেন, আমরা এখন মহাবিশ্বকে একেবারে নতুন চোখে দেখতে পাচ্ছি। আগামী ১০-১৫ বছরে আরও উন্নত যন্ত্র এলে, হয়তো এমন অনেক অজানা ঘটনা ধরা পড়বে, যা আমরা ভাবতেও পারিনি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল