রাণী মাছ। ছোট্ট হলুদ শরীরে কালো ডোরা কাটা। বেশ জনপ্রিয় বাহারি রঙের এ মাছ। অনন্য স্বাদেও। বাজারে চাহিদা ছিলো প্রচুর। এক সময় নদী-হাওর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়লেও, বর্তমানে দেখা মিলছে না এর। ভরা মৌসুম আষাঢ়েও অদৃশ্য এ মাছ। অন্যান্য দেশীয় মাছের মতো রাণী মাছও আজ বিলুপ্তির পথে।
মৎস্য গবেষকরা জানিয়েছেন, আবাসস্থল ধ্বংস, দূষণ আর ক্ষতিকর উপায়ে মাছ শিকারের কারণে আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে রাণী মাছ। বর্তমানে এটি বিপন্ন প্রায়।
বিশ্বনাথের বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য মাছ কম-বেশি থাকলেও উপস্থিতি নেই রাণী মাছের। মৌসুম থাকলেও কোথাও নেই এ মাছ। হরেক মাছের ভীড়ে দেশীয় অন্যান্য ছোট মাছের সাথে, বিশ্বনাথ নতুনবাজারে দেখা মেলে ৩-৪টি রাণী মাছের।
মৎস্য ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন জানান, আগে হাট-বাজারে রাণী মাছের প্রচুর বেচা-কেনা ছিলো। কাস্টমারের চাহিদা থাকলেও, বর্তমানে এ মাছ আর কোথাও কিনতে পাইনা।
মৎস্যজীবি দুলাল মিয়া জানান, একটা সময় এ মৌসুমে কেবল রাণী মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেছি। এখন এ মাছ আর দেখাই যায় না।
বিশ্বনাথ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার ধর জানান, ৬৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত প্রায়। তার মধ্যে রাণী মাছও একটি। সুস্বাদু এ মাছ আজ বিপন্ন। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ সকল মাছের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি না করলে ভবিষতে আর মাছের দেখা পাওয়া যাবে না।
রাণী মাছ কমে যাওয়া কারণ জানতে কথা হয়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জানের সাথে। তিনি ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে জানান, ‘এখন রাণী মাছে প্রজনন মৌসুম। এ মাছ বেশি পাওয়া যায় হাওর, নদী আর বিলে। শুকনো মৌসুমে সেচ দিয়ে এমন ভাবে মাছ ধরা হয়, তখন আর সর্বশেষ প্রজাতিও রক্ষা পায় না। মানব সৃষ্ট কারণেই রাণীমাছ দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো আর থাকে না। আমরা চেষ্টা করছি কৃত্রিম ভাবে রাণী মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ সংরকক্ষণের। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে এ মৎস্য সম্পদ। দেশীয় মাছ রক্ষায় জনসাধারণকেই সচেতন হতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন