ছিয়াশির বিশ্বকাপের সেই নক্ষত্র ঝলক। বিশ্ব দেখেছে বেঁটে ফুটবলারের অবিশাস্য কেরামতি। দুনিয়াজুড়ে একটাই নাম ম্যারাডোনা…বিশ্ব কেঁপেছে বার বার। সবুজ মাঠে আর্জেন্টিনার ফুটবল কবিতার ছন্দ। এসবের লক্ষ্যে কয়েকজন করে চলেছে অনুশীলন। লক্ষ্য ঈশ্বরের নাগাল পাওয়া। ফুটবলের যুবরাজ তাদের গর্ব।
বিরলতম এক উদাহরণ তৈরি করেছে থাইল্যান্ডের গ্রাম। ফুটবলকেই জীবনের অঙ্গ করে তারা গড়ে তুলেছেন এমন এক মাঠ যা পানিতে ভেসে চলে। জমির অভাবে তাদের এই পরিকল্পনা। সেখানেই ম্যারাডোনাকে ঈশ্বর বানিয়ে তাকে পূজা দিয়েই নিবিড় অনুশীলন করেন গুটিকয়েক থাই কিশোর। ক্রমে এই অদ্ভুত কাণ্ডের কথা ছড়িয়েছে।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পানইয়ে দ্বীপ। এখানে পানির মত বিছিয়ে আছে জলধারা। ডুবো পাহাড় আর পাথুরে তটের আঁকাবাঁকা পানিপথের সৌন্দর্য চোখ ভরিয়ে দেয়। সেখানেই চলছে ফুটবলের অনুশীলন। কিন্তু পানির উপরে। কারণ পানইয়ে দ্বীপে তেমন মাঠে তৈরির জমি নেই। তাতে কী হয়েছে ? অতএব শুরু হয়ে গেল বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার সেই ঝড়ো ফুটবলের মুহূর্ত দেখে আপ্লুত থাই গ্রামবাসী নেমে পড়লেন ফুটবল শিখতে।
চারিদিকে পানি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম। এখানকার বাসিন্দারা মূলত মৎস্যজীবী। তাদের উত্তরাধিকারীরা মেতে আছে ফুটবলে। প্রথম বাধা ছিল জমির। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো পানির উপরেই মাঠ তৈরি করা হবে। বয়স্করা বাধা দিয়েছিলেন। ফুৎকারে সেই বাধা উড়িয়ে কয়েকজন নেমে পড়েছিল পানিতে ভেসে থাকা মাঠ তৈরিতে। শুরু হয় কাজ। পুরনো কাঠ-পেরেক জোগাড় করা হয়। পানির মধ্যে খুঁটি পুঁতে তৈরি হয় মাচা। সেই মাচাতেই তৈরি হয় মাঠ। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম ফুটবল মাঠ যেটা ভেসে থাকে পানির উপরে।
প্রথম দিকে সমস্যা ছিল প্রচুর। আনাড়ি হাতে তৈরি সেই পানিতে ভাসা মাঠের পেরেকের খোঁচা বেরিয়ে ছিল। তাতে আঘাত পাওয়া নিত্য ব্যাপার। বল নষ্ট হয়েছে অনেক। তার থেকেও সমস্যা বল জোরে মারলেই সেটা পানিতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সে সব আটকাতে পারেনি ফুটবলকে। এই সমস্যাই স্থানীয় ফুটবলারদের বল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পারদর্শী করে দেয়।
কেটেছে কয়েকটি বছর। ফুটবল খেলা থেকে সরে গিয়েছেন ম্যারাডোনা। বিতর্কে জড়িয়েছেন। কোচ হয়েছেন। কিন্তু পানইয়ে দ্বীপের গ্রামটি তাকে ঈশ্বর বলেই মেনে নিয়েছে। পানিতে ভাসা মাঠেও তাদের অনুশীলনে ঘাটতি নেই। কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তারা। স্থানীয় একটি প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে তাদের দুরন্ত লড়াই তাক লাগিয়েছে পাইনিয়ে ফুটবল দল। সেই শুরু। তরতর করে এগিয়ে চলেছে এখানকার ফুটবল। নজরকাড়া ফুটবল খেলতে শুরু করেছে দলটি। নতুন করে তৈরি হয়েছে পানিতে ভাসমান প্লাস্টিক মাঠ। বর্তমানে পানইয়ে ক্লাব দক্ষিণ থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা একটি ক্লাব।
সম্প্রতি পানইয়ে ক্লাবের সন্ধান পায় একটি থাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার কর্মীদের উদ্দীপনা বাড়িয়ে তুলতে পানইয়ে দলের উপর একটি ছোট্ট সিনেমা তৈরি করা হয়। এরপর থেকে ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপটি ও পানিতে ভাসমান ফুটবল মাঠের কথা।
সব জেনে আপ্লুত ফিফা। বিশ্ব ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তাদের অনুরোধে পানইয়ে ফুটবল নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে। যাকে ঘিরে এত অনুপ্রেরণা, সেই ঈশ্বরকে কাছ থেকে দেখতে চান পানইয়ে গ্রাম।
বিডি প্রতিদিন/০২ মে ২০১৮/আরাফাত