২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সঙ্গে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড দল। আর পরেরবার অর্থ্যাৎ এবার তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
বাংলাদেশের সঙ্গে হারার পর ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলে সাড়া জাগানো পরিবর্তন দেখা যায়। যা পরিলক্ষিত হয়েছে পরবর্তীতে ক্রিকেটের রেকর্ড উল্টে -পাল্টে দেয়া দাপুটে সব ম্যাচগুলোতে।
বিবিসি স্পোর্টে একটি সাক্ষাৎকারে ২০১৫ সালের স্মৃতিচারণ করলে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান দুটো ম্যাচের কথা বলেন, একটিতে ইংল্যান্ড ১২৩ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যা নিউজিল্যান্ড ১২.২ ওভারে তাড়া করে।
আরেকটি ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। মরগ্যান বলেন, বাংলাদেশ ২৭৫ রান তোলে এবং ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যাটসম্যানরা সেই রান তাড়া করার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে চাপের মুখে হার মানে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।
'একটি ফোন কলে আমূল পরিবর্তন'
একটি ফোন কল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে আমূলভাবে বদলে দেয় বলে মনে করা হয়। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেট ডিরেক্টর ও সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস মরগ্যানকে ফোন দিয়ে বলেন, শুধু কোচ পরিবর্তন করা হবে, একটি দল গঠন করা হবে এবং দলটিকে যথেষ্ট সময় দেয়া হবে।
এরপর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ওপেনিং জুটি থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার ও লোয়ার মিডল অর্ডারে লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন আসে।
বিশেষত লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ দাঁড় করায় ইংল্যান্ড, যেখানে ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লাঙ্কেটরাও ব্যাট চালাতে পারেন।
পেস বোলিং অলরাউন্ডার, মঈন আলী ও আদিল রশিদের মতো কার্যকরী স্পিনার এবং সাথে শুরুতে দ্রুত গতিতে রান তোলার মতো ওপেনিং জুটি তৈরি হওয়ার পর ইংল্যান্ড বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা দলগুলোর একটি হয়ে ওঠে।
জেসন রয়ের উদ্বোধনী শুরুর সাথে বেন স্টোকস ও ইয়ন মরগ্যানের মিডল অর্ডার জুটি এবং শেষদিকে লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটিং মিলিয়ে ইংল্যান্ড প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য কঠিন দল হয়ে ওঠে।
২০১৫ বিশ্বকাপের আগেও ইংল্যান্ডের এই দলেরই অনেক সদস্যরা ছিলেন, কিন্তু মূলত যে পরিবর্তন আসে সেটা দলের মানসিকতায়।
শুধু মারকাটারি ব্যাটিংই নয়, আধুনিক ক্রিকেটের সাথে তাল মিলিয়ে অলরাউন্ডার ভিত্তিক।
মরগ্যান বলেন, সবাই তখন ৩০০-৩৩০ রান করছিল, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। ইংল্যান্ডকেও সেটাই করতে হবে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড মোট চারবার ৪০০ রান করে। যা ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য একটা পরিবর্তন।
বাংলাদেশ কি পারবে ইংল্যান্ড থেকে শিক্ষা নিতে?
অপরদিকে এবারের টুর্নামেন্টে 'আত্মবিশ্বাসী' থাকলেও ১১ ম্যাচে আটটিতেই হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বাংলাদেশ। স্থান হয় আট নাম্বারে।
পরে সর্বশেষ শ্রীলংকার সাথে ৩-০ ব্যবধানের হারে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে হারের ধরণ। কোন ম্যাচেই শ্রীলংকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ হেরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম ম্যাচে ৯১ রানে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে হারের পর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ১২২ রানে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অষ্টম হওয়ার পর প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে ছাটাই করা হয় সমঝোতার মাধ্যমে, বিসিবি থেকেই জানানো হয় পারষ্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই কোচের চুক্তির মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়।
এরপর পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশীর সাথেও চুক্তি বাড়ানো হয়নি। নতুন পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট ও স্পিন বোলিং উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়েছে ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে।
এই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি ইংল্যান্ড দল থেকে শিক্ষা নিতে পারবে? -এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার সাথিরা জেসি বিবিসি বাংলাকে বলেন , বাংলাদেশের যথেষ্ট ক্রিকেটার নেই এমন কোন পরিকল্পনা সফল করতে যে ক্ষেত্রে সব ঢেলে সাজানো যাবে।
"আমাদের বোলিংয়ের জায়গাটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেটা আমাদের শক্তিমত্তার জায়গা ছিল।"
"বিশ্বকাপে খারাপ করার পর আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা গিয়েছে, পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট ক্রিকেটার প্রয়োজন হয়।"
"ধরুন সাকিব খেলছে না, তার বিকল্প কে? মুশফিক না খেললে তার বিকল্প কে হতে পারে? বিকল্প না থাকলে পরিবর্তন তো সম্ভব নয়।"
"ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড টার্গেট করেই খেলেছে ২০১৯ বিশ্বকাপ জিতবে, বাংলাদেশ এমন লম্বা পরিকল্পনা কখনোই করে না, শোনা যায় যে পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে কাজ করছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট রিসোর্স থাকে না যে একটা পরিকল্পনা ধরে রাখবে।"
পরিবর্তনের দিকেও আঙ্গুল তুলেছেন মিজ জেসি, "এতো পরিবর্তন হয় যে পরিবর্তনের সাথে তাল মেলানো কঠিন, বিশ্বকাপ খারাপ গেলো কোচ পরিবর্তন করা হয়েছে।"
"হাতে যে অপশন নেই এটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। এখন অনুর্ধ্ব ১৯ বা এ দলের দিকে নজর রাখা যায় তাহলেও কিছুটা সম্ভব। বাংলাদেশের মূল সমস্যা কোন বিষয় ফিক্সড নয়।" সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/০৪ আগস্ট, ২০১৯/আরাফাত