ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা ব্যাটিংয়ে নামলেন যখন, ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে শ্রীলঙ্কা। অভিষিক্ত মিলান রাত্নায়েকে যখন ক্রিজে গেলেন, ১১৩ রানে নেই ৭ উইকেট। চাপের মুখে নেমে প্রথমে ফিফটি করলেন ধানাঞ্জয়া। রাত্নায়েকে পঞ্চাশ ছুঁয়ে উপহার দিলেন রেকর্ড গড়া ইনিংস। দুজন মিলে বিপর্যয় থেকে টেনে নিলেন দলকে।
বুধবার (২১ আগস্ট) ম্যানচেস্টারে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ৩ উইকেটে ৬ ও ৭ উইকেটে ১১৩ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৩৬ রানে অল আউট হয় শ্রীলঙ্কা। আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ইংল্যান্ড করে বিনা উইকেটে ২২ রান। ছয় নম্বরে নেমে লঙ্কান অধিনায়ক ধানাঞ্জয়া খেলেন সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস। তার ৮৪ বলের ইনিংস গড়া ৮টি চারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের দিনে ৯ নম্বরে নেমে ১৩৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭২ রান করেন রাত্নায়েকে।
টেস্ট অভিষেকে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ ইনিংস এটিই। আগের রেকর্ড ছিল ভারতের বালবিন্দর সিং সান্ধুর, ১৯৮৩ সালে হায়দরাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭১ রান করেছিলেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী রাত্নায়েকে মূলত পেসার। সেই তিনিই দলের বিপর্যয়ের দিনে দাঁড়িয়ে গেলেন ব্যাট হাতে। তার ৪১ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারেরও সর্বোচ্চ ইনিংস এটি।
দিনটা যদিও ইংল্যান্ডের। ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের সফলতম বোলার পেসার ক্রিস ওকস। অফ স্পিনার শোয়েব বাশিরও নেন ৩ উইকেট, ৫৫ রান দিয়ে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেটে নতুন বলে পেসারদের জন্য মিলেছে মুভমেন্ট, সঙ্গে ছিল অসমান বাউন্স। পরের দিকে স্পিনও ধরেছে বেশ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারে শ্রীলঙ্কা করে ৫ রান। পরে ১০ বলের মধ্যে শূন্য রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। শুরুটা দিমুথ কারুনারাত্নেকে দিয়ে। অ্যাটকিনসিনের বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। পরের ওভারে ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন নিশান মাদুশকা। খেলবেন নাকি ছেড়ে দেবেন, এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে এলবিডব্লিউ হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন কুসাল মেন্ডিস ও দিনেশ চান্দিমাল। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কুসালকে ২৪ রানে ফেরান গতিময় পেসার মার্ক উড। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দিনেশ চান্দিমালকে এলবিডব্লিউ করেন বাশির। এক প্রান্তে ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান ধানাঞ্জয়া। তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস ও প্রাবাথ জায়াসুরিয়া।
লঙ্কানরা যখন অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়, ধানাঞ্জয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে টেনে তোলেন রাত্নায়েকে। ধানাঞ্জয়া ফিফটি করেন ৫৬ বলে। চা-বিরতির আগে তাকে লেগ স্লিপের ক্যাচ বানিয়ে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন বাশির। ভিশ্ব ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়ে রাত্নায়েকে চালিয়ে যান লড়াই। ফিফটি করেন তিনি ৯৬ বলে। তার দারুণ ইনিংস থামে বাশিরের স্পিনে। নবম উইকেট জুটিতে আসে ৫০ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভিশ্ব রান আউট হন ৬২ বলে ১৩ রান করে।
পরে শ্রীলঙ্কা বোলিং শুরু করে দুই প্রান্তেই স্পিনার দিয়ে। চার ওভার নিরাপদেই কাটিয়ে দেন বেন ডাকেট ও ড্যান লরেন্স, যিনি টেস্ট খেলছেন আড়াই বছর পর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২৩৬ (মাদুশকা ৪, কারুনারাত্নে ২, কুসাল মেন্ডিস ২৪, ম্যাথিউস ০, চান্দিমাল ১৭, ধানাঞ্জয়া ৭৪, কামিন্দু মেন্ডিস ১২, জায়াসুরিয়া ১০, রাত্নায়েকে ৭২, ভিশ্ব ১৩, আসিথা ০*; ওকস ১১-৩-৩২-৩, অ্যাটকিনসন ১৬-৩-৪৮-২, পটস ৯-০-৪৮-০, উড ৮-০-৩১-১, বাশির ২৩-৪-৫৫-৩, রুট ৭-২-১৮-০)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪ ওভারে ২২/০ (ডাকেট ১৩*, লরেন্স ৯*; ধানাঞ্জয়া ২-০-১৪-০, জায়াসুরিয়া ২-০-৮-০)
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ