উইন্ডোজ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য বড় পরিবর্তন আসছে। মাইক্রোসফট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, গত ১৪ অক্টোবর, থেকে ‘উইন্ডোজ ১০’-এর সমর্থন (Support) বন্ধ করে দেবে। অর্থাৎ, ওই তারিখের পর থেকে এই অপারেটিং সিস্টেম আর কোনো নিরাপত্তা আপডেট বা সিকিউরিটি প্যাঁচ পাবে না। ফলে পুরোনো কম্পিউটারগুলো সাইবার আক্রমণ ও ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে। মাইক্রোসফট এখন ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে ‘উইন্ডোজ ১১’-এ আপগ্রেড করতে উৎসাহিত করছে। তবে সব কম্পিউটার নতুন ভার্সনটির জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ উইন্ডোজ ১১ চালাতে আধুনিক প্রসেসর ও TPM 2.0 চিপসহ নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। মার্কিন কনজিউমার গ্রুপ পিআইআরজির সিনিয়র ডিরেক্টর নাথান প্রকটর বলেছেন, ‘উইন্ডোজ ১০-এর সমর্থন বন্ধ হওয়া ভোক্তা ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই একটি বড় ধাক্কা।’ তার ভাষ্যমতে, এই সিদ্ধান্তের কারণে অপ্রয়োজনীয় ই-বর্জ্য বাড়বে এবং উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা অযথা নতুন ডিভাইস কিনতে বাধ্য হবেন।
কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন?
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি ডিভাইস উইন্ডোজ ব্যবহার করছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ এখনো ‘উইন্ডোজ ১০’ চালায় (স্ট্যাটকাউন্টার, জুলাই ২০২৫)। যুক্তরাজ্যের কনজিউমার গাইড ‘উইচ’ অনুমান করছে, এখনো প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষ উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন। তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ জানিয়েছেন, সমর্থন বন্ধ হলেও তারা এটি চালিয়ে যাবেন; আর প্রায় সাতজনের মধ্যে একজন নতুন কম্পিউটার কেনার পরিকল্পনা করছেন। অনেক ভোক্তা সংগঠন এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। ‘আমরা এমন প্রযুক্তি চাই যা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই,’ বলেন প্রকটর। ‘মানুষ নষ্ট বা দ্রুত সাপোর্ট হারানো ডিভাইস নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’
কী বিকল্প রয়েছে?
মাইক্রোসফট ব্যবহারকারীদের সামনে দুটি প্রধান বিকল্প রেখেছে-
♦ উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করা, অথবা
♦ এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেটস (ESU) প্রোগ্রামে যোগদান করা।
এই বিকল্পগুলো ‘Settings > Privacy and Security’ মেন্যু থেকে সম্পন্ন করা যায়। উপযুক্ত পিসি থাকলে ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করতে পারবেন। তবে অনেক পুরোনো ডিভাইস নতুন সিস্টেমটি সমর্থন করে না। যারা এখনই আপগ্রেড করতে চান না, তারা ESU প্রোগ্রামে সাইন আপ করে ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা আপডেট পেতে পারেন। তবে এতে নতুন ফিচার বা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে না। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের (EEA) ব্যবহারকারীরা নিবন্ধনের মাধ্যমে ESU বিনামূল্যে পাবেন। অন্যদের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে এটি বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যাবে। যোগ্য হতে হলে আপনার পিসিতে সর্বশেষ ‘উইন্ডোজ ১০’ সংস্করণ থাকতে হবে, একটি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং ব্যাকআপ নেওয়া থাকতে হবে। অন্যথায়, ৩০ ডলার (প্রায় ২২ পাউন্ড) ফি দিতে হবে বা ১,০০০ মাইক্রোসফট রিওয়ার্ড পয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে খরচ প্রতি ডিভাইসে প্রায় ৬১ ডলার, যা অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।
কী পরিবর্তন হচ্ছে?
২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘উইন্ডোজ ১০’ নিয়মিত সফ্টওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে চালু ছিল। এসব আপডেট নিরাপত্তা ত্রুটি দূর করা, বাগ ফিক্স এবং নতুন ফিচার যুক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে মাইক্রোসফট এখন ব্যবহারকারীদের ‘উইন্ডোজ ১১’-এ যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে, যেখানে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ছাড়া ব্যবহার করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে গোপনীয়তা রক্ষার কারণে অনেক ব্যবহারকারী এই পরিবর্তন নিয়ে দ্বিধায় আছেন।
কী ঝুঁকি তৈরি হবে?
সমর্থন বন্ধ হয়ে গেলে ‘উইন্ডোজ ১০’ পিসি আর নিরাপত্তা আপডেট পাবে না। এতে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ও র্যানসমওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুচরা বিক্রেতা, গাড়ি নির্মাতা এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বড় সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে, যা ঝুঁকির মাত্রা বুঝিয়ে দেয়। মাইক্রোসফটের কনজিউমার সিএমও ইউসুফ মেহেদী বলেন, সমর্থনহীন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা শুধু নিরাপত্তা নয়, বৈধতা ও নিয়ন্ত্রক সম্মতির (Regulatory Compliance) ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়াও, আপনি লক্ষ্য করবেন, অন্যান্য সফ্টওয়্যারগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে, কারণ ডেভেলপাররা পুরোনো অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে তাদের সর্বশেষ ফিচারগুলো পাঠানো বন্ধ করে দেবে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সিস্টেমগুলো বাস্তবে অচল হয়ে পড়বে। অর্থাৎ ‘উইন্ডোজ ১০’-এর এক যুগের অবসান হচ্ছে, আর ব্যবহারকারীদের এখন সিদ্ধান্ত নেবে- আপগ্রেড, সিকিউরিটি এক্সটেনশন, নাকি ঝুঁকিতে থাকবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি