প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে যুদ্ধের কৌশল। এক সময়ের শুধু মানব-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের বদলে এখন আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ড্রোন। এসব চালকবিহীন ড্রোন এখন একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে যুদ্ধের কৌশলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
ড্রোন ঝাঁকের উত্থান : নেমিক্স থেকে স্বার্ম
সম্প্রতি মার্কিন-জার্মান স্টার্টআপ অটেরিয়ন উন্মোচন করেছে নতুন সফটওয়্যার ‘নেমিক্স’। এটি যে কোনো ড্রোনকে সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে একটি সমন্বিত বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে পারে। অটেরিয়নের প্রধান নির্বাহী লরেনজ মেয়ার এটিকে ‘খুব বড় মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে এখনো এটি বড় পরিসরে ব্যবহৃত হয়নি, তবে পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তির অধীনে ৩৩ হাজার এআই ড্রোন কিট ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে, যা নেমিক্স দিয়ে আপগ্রেড করা সম্ভব। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এই ড্রোন ঝাঁক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে। কিয়েভভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্বার্ম দাবি করেছে, তাদের প্রযুক্তি ৮২ হাজারের বেশি অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে।
মানব ও প্রযুক্তির একীকরণ
হেলসিং কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা গুন্ডবার্ট স্কার্ফ বলেন, এ প্রযুক্তি একজন ব্যক্তিকে একসঙ্গে একাধিক ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দেয়। এতে আক্রমণ কৌশল আরও সহজ হয়। ২০০৬ সালে মার্কিন নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো তাদের যুদ্ধবিমান থেকে মাইক্রোড্রোন নামিয়ে বড় আকারের ড্রোন পরীক্ষা শুরু করে। এরপর ২০১৭ সাল থেকে চীনও বড় পরিসরে ড্রোন প্রদর্শন করছে। রাশিয়াও একযোগে ‘শাহেদ ড্রোন’ ব্যবহার করে ইউক্রেনের শহরগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার হার বেড়েছে।
ডেটা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা
ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো দাবি করছে, তাদের কাছে ড্রোন ফুটেজের বিশাল ডেটাবেজ থাকায় তারা বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কেবল ইউক্রেনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরই ‘ইউনিভার্সাল মিলিটারি ডেটাসেট’-এ প্রবেশাধিকার আছে। অন্যদিকে সিস্টেম্যাটিক কোম্পানির মাইকেল হোলম জানান, ড্রোন নির্মাতারা উন্মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, ফলে অল্প সময়ে কার্যকরী ড্রোন ঝাঁক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি