টানা ছয় দিন ধরে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে রাজধানীর সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। হাতে লাঠি নিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে গাড়ি সামলে মানুষকে ফুটপাত, ওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেতন করছেন তারা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গাছ লাগানো, দেয়াল রং করা, আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
গত রবিবার রাজধানীর উত্তরা, খিলক্ষেত, গুলশান, বনানী, বিজয় সরণি, প্রগতি সরণি, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদগেট, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সরজমিন দেখা যায়, উত্তরা এলাকায় নওয়াব হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করছেন। তারা যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন নিশ্চিত করছেন। একই সঙ্গে কেউ যেন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে না পারেন সেদিকেও কড়া নজর রাখছেন তারা।
মোকাদ্দেস হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করেছেন। অনেক চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে। এখন আমাদের দেশকে আমরাই সাজাবো। সড়কে এতদিন নানান অসংগতি থাকলেও এখন আর সেগুলো করতে দেওয়া হবে না। তরুণদের মধ্যে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারা যে কোনো ধরনের বৈষম্য এবং দুর্নীতি রুখে দিতে বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে যেখানে-সেখানে থামতে পারছে না গাড়ি। উল্টোপথে চলার কোনো সুযোগ নেই। চালক ও যাত্রীর হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে চলাচল বন্ধ। লাইন ভেঙে তাড়াহুড়ো করে সামনে যাওয়ার তাড়া নেই চালকদেরও। পথচারীরা রাস্তা পার হচ্ছেন শৃঙ্খলা মেনে। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীও তুলতে পারেননি বাসের হেলপাররা। কারওয়ানবাজার মোড়ে দেখা গেল হেলমেট না থাকায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে এক ঘণ্টা যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিলেন শিক্ষার্থীরা। তিনিও হাসিমুখে বাইক রেখে নেমে গেলেন রাস্তায়।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সালমান মেহেদী বলেন, ‘সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে সাধারণ জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই জনসাধারণের যেন কোনো ভোগান্তি না পোহাতে হয়, সে জন্য আমরা সড়কে নেমেছি। রবিবার সব অফিস, স্কুল, কলেজ খুলে যাওয়ায় রাস্তায় ভিড় বেড়েছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব বুঝে না নেবে, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সড়কের ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করব।’ পথচারী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। শিক্ষার্থীরা সড়কে গাড়ির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন, যা আমাদের জন্য খুব উপকার হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। নইলে ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হতো।’
ভেঙে ফেলা বিভিন্ন স্থাপনা মেরামতের কাজ করছেন ছাত্রছাত্রীরা। আগুনে ঝলসে যাওয়া স্থানের রং করছেন। আঁকছেন বিভিন্ন আলপনা। সড়ক থেকে গাছ উপড়ে ফেলা স্থানে নতুন করে রোপণ করছেন চারা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পরিষ্কার করেছেন একদল শিক্ষার্থী। পরে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন সেনাসদস্যরা। রাজধানীর হলিক্রসের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘দেশপ্রেমের তাড়না থেকে এখানে এসেছি। এই দেশটা আমাদের, দেশটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ রাখার দায়িত্বও আমাদের। বৈষম্যহীন নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছে এই দেশের ছাত্রসমাজ। সেই শপথ বাস্তবায়নের সহযোদ্ধা হতে এখানে এসেছি।