উন্নয়ন কাজে বছরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। একদিকে সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, অন্যদিকে ভাঙাচোরা সড়ক বছরের পর বছর সংস্কার না করায় যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। এক সংস্থা সড়ক খুঁড়ে কাজ করে যাওয়ার পর আরেক সংস্থা আসে সড়ক কাটতে। ফলে একই সড়ক বছরে একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি করপোরেশনসহ যেসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয়ই নেই। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না। নাগরিকরা নিত্যদিনের দুর্ভোগের জন্য সিটি করপোরেশনের অব্যবস্থাপনা আর অবহেলাকে দায়ী করলেও কর্মকর্তারা দায় চাপান ঠিকাদারের ওপর। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চার মাস ধরে প্রশাসক চালাচ্ছেন রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সামলে দুই প্রশাসক সিটি করপোরেশনে সময় দিতে পারছেন না। ফলে করপোরেশনের নৈমিত্তিক কাজে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে কিছু দিন ধরে। ব্যস্ত সড়কের মাঝখান দিয়ে খুঁড়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। এদিকে পাতালরেলের কাজ চলছে রাজধানীর ভাটারা থেকে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত। এমআরটি লাইন-৫ নামের এই ভূগর্ভস্থ মেট্রোরুটের ইউটিলিটি সার্ভিস অপসারণের কাজ চলছে এখন। ফলে নর্দা, বসুন্ধরা, কুড়িল, জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে মূল সড়ক। এতে দিনরাত যানজট লেগে থাকছে এই সড়কে। উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ এই ভোগান্তি মেনে নিলেও তাদের কষ্ট উপলব্ধি করা যায়। যেভাবে মেট্রোরেল নির্মাণের সময় পল্লবী, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মানুষ সীমাহীন ভোগান্তি সইয়েছিল। তবে যেসব এলাকায় সমন্বয়হীনতার কারণে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এদিকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে অনেকদিন ধরে। এর সঙ্গে ওপর দিয়ে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গাজীপুরমুখী র্যাম্প। নিচে আবদুল্লাহপুর থেকে পশ্চিমে কামারপাড়ার দিকে রাস্তার মাঝখান দিয়ে খুঁড়ে পিলার বসানোর কাজ চলছে। এই অংশে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছে মানুষ। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে এর সুফল পাবেন সব শ্রেণির মানুষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগরের সব উন্নয়নমূলক কাজের দায়-দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এগুলো যথাসময়ে শেষ করে মানুষের ভোগান্তি দূর করতে হবে। আমরা যে ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছি, তারাই কাজে বিলম্বিত করে। আর বদনাম হয় আমাদের।
এদিকে কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জামানতের বিনিময়ে সময় বাড়িয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু কবে শেষ হবে কাজ, তার সঠিক উত্তর জানে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনও। এ ক্ষেত্রে পরস্পরকে দোষারোপ না করে সংকট মুক্তির জন্য আন্ত সংস্থার সমন্বয় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিচ্ছেন নগরবিদরা।
নগরবিদ স্থপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাধ্য করতে পারব সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সড়ক খনন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংস্থাগুলো নামমাত্র ফির বিনিময়ে এ রাস্তা কাটতেই চাইবে। এতে জনগণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে আর ট্যাক্সের টাকা হরিলুট হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক গণপরিবহন ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঠিকাদারদের বছরের শুরুতেই একটা পরিকল্পনা দিতে হবে, কখন কে কোন সড়ক কাটবে। সিটি করপোরেশনকে সমন্বয়ের কাজটা করতে হবে। জনগণ যেহেতু ভোগান্তিতে পড়ছে, তাই তাদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে আনতে হবে সমন্বয় ও পূর্বপ্রস্তুতি। একই সঙ্গে প্রয়োজন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও দক্ষ কর্মীর।