রাজধানীর ওভারব্রিজগুলো যেন দেখার কেউ নেই। অযত্ন আর অবহেলায় ভ্রাম্যমাণ হকারদের দখলে চলে গেছে ফুটওভারব্রিজগুলো। ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের সড়কে রাস্তা পারাপার নিরাপদ করতে তৈরি করা হয় আবরার ফুটওভার ব্রিজ। রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ দেখা যায়, ওভারব্রিজটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ছে দিন দিন। গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। আর অনেক আয়োজন করে চালু করা এ ব্রিজটির চলন্ত সিঁড়ি সারা বছরই বন্ধ থাকে।
নাসনীম আহমেদ কর্মরত আছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। তিনি প্রতিদিন এ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন। নাসনীম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী আবরার নিহত হওয়ার পর এ ব্রিজটি চালু করা হয়েছিল। তারপর কিছুদিন মানুষ ঠিকঠাকভাবে ওভারব্রিজ ব্যবহারও করছিল। কিন্তু এরপর থেকেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবৈধ দোকানপাটের কারণে হাঁটাচলা করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আর নোংরা পরিবেশে অনেককেই দেখা যায় নাক-মুখ ঢেকে ওভারব্রিজটি ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, চলন্ত সিঁড়িটি দেওয়া হয়েছে মানুষের ব্যবহারের জন্য। অথচ সারা বছর এটি থাকে বন্ধ। যদি বন্ধই থাকে তবে কেন এটি রাখা হয়েছে?
এমন অভিযোগ করেন ওভারব্রিজটি ব্যবহার করা অসংখ্য মানুষ। সবারই চোখেমুখে দেখা যায় বিরক্তি। পেশায় চিকিৎসক সোহেল খান বলেন, ডেন্টাল ক্লিনিকে চাকরির সুবাদে আমাকে এখানে আসতে হয় সপ্তাহে তিন দিন। নগরীর ব্যস্ততম এ সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীনতার কারণে এ সড়কে থাকা ফুটওভারব্রিজটি শুধু সৌন্দর্যই হারাচ্ছে না, মানুষের ব্যবহারের আগ্রহও হারাচ্ছে। রাস্তার দুপাশ থেকে মানুষজন বেপরোয়াভাবে পারাপার হচ্ছেন। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন না থাকায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আবরার ওভারব্রিজটির ওপরে এবং নিচে অনেক অস্থায়ী অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সড়ক পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও ওপরের ফুটওভার ব্রিজগুলো অপরিচ্ছন্ন রেখে দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, সড়কের পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ পরিষ্কার করতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা তাদের দেওয়া নেই। তাছাড়া সাধারণ ঝাড়ু ছাড়া ওভারব্রিজ পরিষ্কারের জন্য তেমন বিশেষ কিছু দেওয়া হয় না তাদের।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বনানী ও এয়ারপোর্টের চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ দুটির অবস্থা আরও খারাপ। এর বাইরে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় সাধারণ যেসব ব্রিজ আছে, তার অধিকাংশই দীর্ঘদিন দেখভালের অভাবে প্রায় ভঙ্গুর অবস্থা। অনেকগুলোর ওপরে ওঠার সিঁড়ি ক্ষয় হয়ে গেছে। চলাচলের অংশে দেখা গেছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজে থাকলেও অযত্ন-অবহেলায় মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে ওভারব্রিজ ব্যবহারে। নোংরা ওভার ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় শিশু ও নারী আহত হয়েছেন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে। প্রায় প্রতিদিন সড়কে যানজট হওয়ায় ঝুঁঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পথচারীরা।