জাতীয় বা জুনিয়র। বাংলাদেশ নারী দল যে কোনো আসরে খেললে গোল উৎসবটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে জাতীয় দল তিন ম্যাচে ১৬ গোল করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশের মেয়েরা শুরুটা করল দুর্দান্ত জয়ে। গতকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় অনুষ্ঠিত চার জাতি এ আসরে ৯-১ গোলে পরাজিত করেছে শ্রীলঙ্কাকে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গতিময় খেলা খেলে শ্রীলঙ্কাকে দাবিয়ে রাখে বাংলাদেশ। সত্যিকারে লাল-সবুজের দাপটে লঙ্কানরা ছিল অসহায়। নারী ফুটবলে শ্রীলঙ্কা যে দুর্বল দল তা কারও অজানা নয়। কিন্তু ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে নব্বই ভাগ বল দখলে রাখাটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কৃতিত্বের।
জুনিয়রদের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষদের নিয়ে যেভাবে বিধ্বস্ত করেছে তাতে মনে হচ্ছিল মেয়েরা কোনো পাড়ার দলের বিপক্ষে খেলছে। ডাবল রাউন্ড পদ্ধতিতে খেলা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ছয় ম্যাচ খেলতে হবে। ৯ দিয়ে শুরু গোল সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটাই অপেক্ষা। অবশ্য গোলের ব্যবধান যায় হোক না কেন বাংলাদেশের মূল টার্গেট শিরোপা ধরে রাখা। এখানে আসল লড়াই হবে নেপালের বিপক্ষে। জুনিয়র দল হলেও ৯ ফুটবলার জাতীয় দলেরই। তারা কিছু দিন আগে মিয়ানমারে খেলে এসেছেন। অথচ তাদের মধ্যে ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়নি। পুরো সময়ে উজ্জীবিত হয়ে খেলেছেন। কোচ ছোটনের অধীনে নারী ফুটবলে সাফল্যটা শুরু। সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে তার শিষ্যরা অনেক ট্রফি উপহার দিয়েছেন। তবে পিটার বাটলার দায়িত্বে আসায় মেয়েদের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ হচ্ছে। টেকনিক্যাল দিকটাও উন্নতি হচ্ছে। যা সাফ অনূর্ধ্ব-২০ তো বটেই সামনে এশিয়ান কাপে কাজে লাগবে।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় বাংলাদেশের বড় জয়ের পেছনে সাগরিকার কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। তিনি টুর্নামেন্টের শুরুতেই হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়ে যান। এ সেই সাগরিকা যিনি আলোচনায় আসেন আগের অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্ট খেলে। সাবিনা খাতুন ও ঋতুপর্ণা যে গতিতে গোল করেন তা সাগরিকার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে তিনিই হতে পারেন আগামীতে নারী ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত তারকা। জুনিয়র হলেও তার পায়ের কাজ দেখার মতো। শ্রীলঙ্কা শুরু থেকেই ছিল এলোমেলো। মাত্র দুই মিনিটেই প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দৃষ্টিনন্দন ফ্রি কিকে গোলটি করেন স্বপ্না রানী। এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মাঠ কর্দমাক্ত ও ভারী হয়ে গেলেও গোলের জন্য ভুগতে হয়নি আফঈদাদের। পাঁচ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডিফেল্ডারদের বোকা বানিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকী আক্তার। ৩৭ মিনিটে গোলের খাতা খোলেন সাগরিকা। শিখার দারুণ ক্রসে বল পেয়ে লঙ্কান গোলরক্ষককে পরাভূত করেন।
প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ রিলাক্সে খেলে গোলের ব্যাপারে তেমন উৎসাহিত ছিল না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ গোল করার পর বাংলাদেশের জয় তো নিশ্চিতই ছিল। তাই দ্বিতীয়ার্ধে কতটা পরিশ্রম করে খেলবে তা ছিল দেখার বিষয়। না দ্বিতীয়ার্ধে বরং গোলের সংখ্যা বাড়াতে মরিয়া ছিলেন মেয়েরা। স্বাগতিকদের গতির সামনে প্রতিপক্ষরা যেন উড়ে যাচ্ছিল। ৪৭ মিনিটে মুনকী আক্তার চতুর্থ ও ৪৯ মিনিটে শিখা ব্যবধান করেন ৫-০। কয়েক মিনিট পরেই সাগরিকা নিজের দ্বিতীয় ও দলের ষষ্ঠ গোল করেন। ৫৮ মিনিটে দলের সাত নম্বর গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সাগরিকা। দলের বাকি দুই গোল করেন রূপা ও শান্তি। শ্রীলঙ্কার সান্ত্বনার গোলটি করেন লায়ন শিখা। আগামীকাল নেপালের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। দিনের অপর ম্যাচে নেপাল ৬-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে ভুটানকে।