মানুষ বলে কেয়ামতের দিন কখন আসবে? যখন চন্দ্র-সূর্য একত্র করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে পালানোর পথ কোথায়? (সুরা কিয়ামাহ-১, ৯-১০)। এই নিদর্শন হবে কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিন। কেয়ামত দিবস আসার আগের কিছু ভয়াবহ ফিতনা সংঘটিত হবে, যার বিবরণ রসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের অবহিত করে গেছেন যাতে আমরা ওই ফিতনা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারি। রসুল (সা.) বলেছেন, “কেয়ামতের আগে এমন যুগ আসবে, যখন ইলম তুলে নেওয়া হবে আর মূর্খ শাসক দ্বারা শাসন পরিচালিত হবে। পাপাচার, ব্যভিচার ও খুনখারাবি বৃদ্ধি পাবে। প্রত্যেক যুগ তার পূর্ববর্তী যুগ থেকে নিকৃষ্ট হবে। (বুখারি-৬৫৭৩-৬৫৭৮)। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে রসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত দুটি দল একে অপরের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অথচ দুই দলের মূল দাবি হবে একই, আর যে পর্যন্ত না ৩০ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব হবে তারা প্রত্যেকেই নিজকে আল্লাহর নবী দাবি করবে। ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সময়ের পরিধি সংকীর্ণ হয়ে আসবে, ফেতনা-ফ্যাসাদ, নৈরাজ্য, হানাহানি, কতল, কলহ-বিবাদ বেড়ে যাবে; আর এমনকি তোমাদের মধ্যে অর্থসম্পদের এমন প্রাচুর্য দেখা দেবে যে সম্পদশালী ব্যক্তি ও ধনসম্পদের মালিক সে চিন্তিত ও পেরেশান হয়ে পড়বে এজন্য যে কে তার সদকা গ্রহণ করবে। (বুখারি-৬৬২৫)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, কতগুলো বুদ্ধিহীন কুরাইশ বালকের হাতে আমার উম্মতের উম্মত ধ্বংস হবে। (পরিচ্ছেদ-৯২/৩ বুখারি আধুনিক প্রকাশনী-৬৫৬৭ ও ৬৫৮০)। শেষ জমানায় আকস্মিক মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাবে। ভালো স্বাস্থ্য, শক্তিতে তারুণ্যের ছাপ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ তারা মারা যেতে পারে। সেটা থেকে গাড়ি দুর্ঘটনা, হৃদরোগে অথবা অন্য কোনো অজ্ঞাত রোগে, যা আমরা দেখতে ও শুনতে পারছি। সবচেয়ে ছোট আলামত অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলবে, অনেকে অশ্লীতা ছড়াবে। মানুষ তাদের দায়িত্বে অবহেলা করবে। (মুসলিম-২৯৫৫)। বড় আলামত দাজ্জাল, ইয়াজুস, মাজুস, সূর্য পশ্চিম দিকে উঠবে এবং ঈসা (আ.)-এর আগমন। (বুখারি ৬৫৯১)। অতএব কেয়ামত অত্যাসন্ন এটা নিশ্চিত, তবে আমরা জানি না তা কখন আসবে। তবে ছোট আলামতগুলো অধিকাংশই প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে, যা যাচাই করলে বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হবে না।
তাই আমাদের উচিত তওবা করা অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া। বিবেকসম্পন্ন মানুষ হিসেবে সৎ পথে চলার সংকল্প করা। যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যু আসতে পারে এ ধারণা নিয়ে বেশি বেশি তওবা করা। যারা রোবট বানিয়ে নারী ও পুরুষের চাহিদা পূরণের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে স্ব-স্ব পরিবার ও গোষ্ঠীদের দৃষ্টি দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করা, কারণ এটি দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা। আমাদের ইমানি শক্তিতে বলীয়ান হওয়া অত্যাবশ্যক। আমাদের পরকাল, মৃত্যু ও হিসাবের দিন ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কেয়ামত দিবসে মিজানের পাল্লা থাকবে যাতে আমলের পরিমাপ করা হবে। অতএব যাদের পাল্লা ভারী হবে ভালো আমল দ্বারা, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে খারাপ আমলের কারণে, তারা নিজেরা নিজেদের কারণে জাহান্নামে নিপতিত হবে। অন্যদিকে কাফের ও মুশরিকদের জন্য হবে জাহান্নাম চিরস্থায়ী আরাম। তাই আসুন! আমরা তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়, তিনি তার ক্ষমার দ্বার উন্মুখ রেখেছেন। হে মহা ক্ষমাশীল আল্লাহ, আমাদের অধিক পরিমাণে তওবা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট